বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত সরকারের মনে অনেক কষ্ট, কারণ তাদের প্রিয় মানুষ শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নেই। শেখ হাসিনার আমলে ভারত ব্যাপক সুবিধা নিয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার রুপসা গ্রামে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকের বাড়িতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে অধিকার আছে, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে, তাদের যে কথা বলার অধিকার আছে, মত প্রকাশের অধিকার আছে এবং প্রত্যেকে মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করার অধিকার আছে, সেই অধিকারে শুরু থেকেই বিশ্বাস করত না আওয়ামী লীগ। বাবার আমল থেকে বিশ্বাস করত না। এই জন্য বাবার আমল হচ্ছে বাকশাল। আর বাবার সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে বহাল রাখতে চেয়েছিল শেখ হাসিনা।
রহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ছিল ভারতনির্ভর সরকার। নিজের দেশের চেয়ে ভারতের চিন্তাই বেশি করতেন তিনি। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভারতনির্ভর ছিল। যে কারণে বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে এমন চুক্তি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। যে কারণে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। আর হাসিনার পক্ষ নিয়ে সে দেশের মিডিয়াগুলো ডাহা মিথ্যা প্রচার করে চলছে। বাংলাদেশের বদনাম হয় এমন কাজগুলো ইচ্ছে করেই করছে সেই দেশের মিডিয়া।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবী থেকে এ পরিবর্তনকে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছে। কি মুসলিম বিশ্ব, কি গণতান্ত্রিক বিশ্ব। প্রত্যেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ যে এরকম ভয়ংকর একজন স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়েছে। যে নিজ দেশের শিশুদের হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। শুধু তাই নয়, তার জন্য যে কান্নাকাটি করছে, কত মিথ্যা অপপ্রচার করছে, কত অপবাদ দিচ্ছে- তার শেষ নেই। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হাজার বছরের। আমরা জন্মের পর থেকে এখানে হিন্দু-মুসলমান ভাঙন দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, সাতটি বিদুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে, এর সঙ্গে ভারতের এক ব্যবসায়ী জড়িত আছে। উপরে দেখিয়েছে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির নাম, তাও আবার সব শেখ পরিবারের আত্মীয়স্বজন। বিনা টেন্ডারে সব কয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছে। কমদামি কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছে ভারতের ব্যবসায়ী আদানি, তিনি আবার হুমকি দিয়েছেন টাকা পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন বন্ধ করে দিবেন।
রিজভী আরও বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস নামে এক ব্যক্তি, যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ সেই সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন- তাকে পূর্বেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার অপরাধের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করলে ভারত এই ইস্যুটাকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দোহাই দিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইলো। বাংলাদেশের মানুষ আজ তাদের চক্রান্ত বুঝতে শিখেছে।
তিনি বলেন, অন্যের জন্য গর্ত করলে, সে গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। তার প্রমাণ শেখ হাসিনা। ভিডিও বার্তা দেওয়ার জন্য তারেক রহমানের সমালোচনা করতেন। আজ শেখ হাসিনা নিজেই ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথায় গেল আপনার বাহাদুরি। তিনি আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দি রেখেছিলেন। ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মুখে ২ হাজার ছাত্র-জনতার হত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনা চলে গেছেন। তিনি ভেবেছিলেন তার প্রভু ভারত সরকার তাকে টিকিয়ে রাখবে, কিন্তু পারেনি।
তিনি আরও বলেন, ভারত বলছে আলু, পেঁয়াজ, চাল রপ্তানি করবে না। তাদের বলতে চাই, এসব জিনিস আমরা বিনা পয়সায় আনি না। টাকা দিয়ে কিনে আনি। আপনার না দিলে অন্য জায়গা থেকে আনবো।
রহুল কবির রিজভী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং আহতদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে তাদের নামে স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করতে হবে। বিএনপি জনগণের দল। আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে।
পরে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন রহুল কবির রিজভী।
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সভাপতি আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন