লাখো মানুষের কষ্ট রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার ডিএনডির অভ্যন্তরীণ খালের পচা পানি। ডাইং কারখানার বিষাক্ত পানি, বাসাবাড়ির বর্জ্য, সরাসরি বাথরুমের ময়লা, জীবজন্তুর মৃতদেহসহ বিভিন্ন আবর্জনায় দুর্গন্ধময় পানি প্রবাহিত হয় ডিএনডির অভ্যন্তরীণ এ খালে। এ খালের পচা পানির রং আলকাতরার মতো কালো। ব্যবহারের অনুপোযোগী ডিএনডি অভ্যন্তরীণ খালের এ পানিতে মরণব্যাধি এডিস মশাসহ সব ধরনের মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ডিএনডির অভ্যন্তরীণ এ খালকে অনেকেই মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার হয়ে হাজীনগর, বড়ভাঙ্গা, বোর্ড মিল, কোদাল ধোয়া, মাতুয়াইল নিউ টাউন, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, নিমাই কাশারী, টেংরাসহ বিশাল আবাসিক এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে ৬টি ডাইং কারখানার পানি কোনো প্রকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ছাড়াই সরাসরি খালের মধ্যে ফেলছে।
এ ছাড়া এসব এলাকায় প্রায় ৩৫টির মতো বাজার রয়েছে। এসব বাজার সংলগ্ন এলাকায় বাজারের মুরগির দোকানের বর্জ্য, কসাইখানার বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা ফেলছে সংশ্লিষ্ট বাজারের দোকানিরা। যদিও এসব ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করার জন্য রয়েছে সিটি করপোরেশনের ময়লা সংগ্রহের পয়েন্ট। আরও দেখা গেছে, বাসাবাড়ির টয়লেটের ময়লা সরাসরি পাইপ দিয়ে এ খালের ওপর ফেলা হচ্ছে।
তা ছাড়া বাজার সংশ্লিষ্ট এলাকায় মৃত মুরগি, বাজারের পচা মাছ এবং মুরগি কিংবা গরুর নাড়িভুঁড়ি ফেলে খোলা এ খালের পানিকে আরও বেশি দূষিত করছে কতিপয় দোকানি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কুতুবখালী প্রধান সড়ক থেকে ধোলাইপাড় মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এখানে নিষিদ্ধ পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা জমে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় এ খালটি একটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে উঠছে। এসব খালের পানি প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং সব ধরনের মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এতে এসব এলাকার ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ সাধারণ মানুষের মশা বাহিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে হাজীনগর এলাকার রিয়াজ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এলাকায় প্রচুর মশা-মাছি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো দোকানপাটে বসার কোনো সুযোগ নেই মশার যন্ত্রণায়। এমন কি দিনের বেলাতেও মশারি টাঙাতে হয়। এসব মশা-মাছির উৎপাত কমাতে কেউ কোনো ভূমিকা রাখছে না। নামেমাত্র ওষুধ ছিটালেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এ ছাড়া সড়কের পাশে এসব খোলা অভ্যন্তরীণ খালগুলো বন্ধ করে সরকার যদি বক্স কালভার্ট করে দিত, তবে এলাকার পরিবেশ যেমন ভালো থাকত এবং মশা-মাছির উৎপাত থেকে মানুষ রেহাই পেত। এ খালের ময়লা পানির দুর্গন্ধ থেকেও আমরা মুক্তি পেতাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৬, ৬৭, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জোন ৮-এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. খলিল কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি যদিও আমাদের ডিএসসিসির আওতাধীন কিন্তু এসব অভ্যন্তরীণ খালগুলো ডেভেলপমেন্ট করার দায়িত্ব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এসব অভ্যন্তরীণ খালগুলো উন্নয়নের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যদি সিটি করপোরেশনকে বলে তাহলে হয়তো ডিএসসিসি তা উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রজেক্ট ডিএনডির (নারায়ণগঞ্জ) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাজিব (এসডিই) কালবেলাকে বলেন, এ প্রজেক্টটি সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়ন হবে। ২টি পর্যায়ে এটি হস্তান্তর হতে পারে- একটি হচ্ছে জমির মালিকানাসহ, অপরটি হচ্ছে অনাপত্তি আকারে। তবে অনাপত্তি আকারে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হবে। এখন পাউবো এসব খালের রক্ষণাবেক্ষণ করলেও পরে সিটি করপোরেশন এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
মন্তব্য করুন