ময়মনসিংহের ভালুকায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক অবমূল্যায়িত হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
১৯৭২ সালের বিধি মতে, জাতীয় ও বিশেষ দিবস ছাড়াও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিসসমূহ যেমন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ ও জেলা কারাগার, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্ট অফিসসমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তরে সকল কর্মদিবসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক। তবে ময়মনসিংহ ভালুকা উপজেলার বেশিরভাগ কার্যালয়ে এ বিধি মানা হচ্ছে না।
উপজেলার পরিষদের প্রধান ভবন ও উপজেলা ভূমি অফিস ছাড়া অধীন সকল কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, বিউবো), উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকতার কার্যালয়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য), ভালুকা সদর ক্লিনিক, পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক ভালুকা শাখা, সরকারি টেলিফোন অফিস, ভালুকা খাদ্য গুদাম, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন, ওয়াহেদ টাওয়ারে উপকর কমিশনারের কার্যালয় (সার্কেল-১৭, ভালুকা), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচভবন ভালুকা।
এ ছাড়া উপজেলা পুরাতন ভবন উপজেলা কৃষি, উপজেলা শিক্ষা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা, উপজেলা নির্বাচন, উপজেলা যুব উন্নয়ন, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি, ভালুকা উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে বিশেষ দিবসেও দেখা যায় না জাতীয় পতাকা। বিশেষ দিবস ছাড়া ঊর্ধ্বতন নির্দেশনা না থাকায় নিয়মিত কর্মদিবসে উত্তোলন করছেন না জাতীয় পতাকা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বিশেষ দিবস ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হয় না। তাছাড়া স্ট্যান্ড না থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ভালুকা নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম আনুয়ারুজ্জামান বলেন, বিশেষ দিবস ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হয় না। উপজেলা অফিসে ওঠানো হয়, আলাদাভাবে আমাদের অফিসে পতাকা উত্তোলনের কোনো আইন নেই।
উপসহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) পলাশ সরকারকে ভালুকামুক্ত দিবসেও পতাকা উত্তোলন না করার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ৮ ডিসেম্বর ভালুকামুক্ত দিবস তাতে কী হয়েছে। গত বছরও পতাকা উত্তোলন করিনি। বিশেষ দিবস ছাড়া পতাকা উত্তোলন করি না। উপরের নির্দেশ থাকলে তুলতাম।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমার মনে না থাকার কারণে পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মো. রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, পতাকা উত্তোলন করাটা যদি ভুলে যায়, তবে আগামী দিনে প্রজন্মরা আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে। জাতীয় পতাকা অবমূল্যায়নকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
এ বিষয়ে একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা কালবেলাকে জানান, দীর্ঘদিন খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছি। পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা। এই পতাকা উড়তে দেখলে মনটা ভরে যায়। যখন দেখি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করে না তখন বড়ই কষ্ট লাগে। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি কেন প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তলন করে না। এদের বিচার হওয়া দরকার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলীনূর খান কালবেলাকে বলেন, উপজেলা পরিষদের ভেতরে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেই চলে। আর বাইরে যাদের আলাদা আলাদা ভবন অথবা অফিস অবশ্যই পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
মন্তব্য করুন