কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী এলাকায় ৫ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বাধা দিতে গেলে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কয়েক দফায় জমির মালিকদের ওপর হামলা করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জমির দালালরা। এতে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হন।
অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ এলাকাবাসীকে পিটিয়ে উল্টো জমির মালিকদের বিরুদ্ধে ওইদিন রাতেই উখিয়া থানায় মামলা করেছে ফায়ার সার্ভিস।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসেন বলেন, ১৪ জনের নাম একটি মামলা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি সেখানে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন আহত হয়েছেন।
হামলা ও মামলার বিষয়ে একাংশ জমির মালিক ভুক্তভোগী শহিদুল্লাহ বলেন, আমাদের জমির ওপর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন স্থাপনা করতে যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা ইনানীতে যায়। এরপর তাদের কাজে বাধা দিলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের ১০-১২ আহত হন।
তিনি বলেন, স্থানীয় একটি লাঠিয়াল বাহিনীর সহযোগিতায় কয়েক দফায় তারা (ফায়ার সার্ভিস) আমাদের ওপর হামলা করে। আহত অবস্থায় কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অথচ তারা আমাদের ওপর মামলা করেছে।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার দুপুরে ওই জমির ওপর স্থাপনা তৈরি করার সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
অভিযোগ রয়েছে, উখিয়ায় ৩ একরের জমি ক্রয় করে ফায়ার সার্ভিস। এরপর ৫ একর জমি দখল করে মোট ৮ একর জমি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নেয় তারা। দখল করা এ জমিতে স্থাপনা তৈরি করতে গেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) ইকবাল বাহার বুলবুল নিজেকে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে এ জমি দখলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে ভুক্তভোগীরা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিগত এক বছর আগে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কর্মকর্তা অতীশ চাকমা ও সোনারপাড়া এলাকার দালাল কালা জমিরের মাধ্যমে কাগজ জালিয়াতি করে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ইনানীর সোনারপাড়া নিদানিয়া এলাকায় অবস্থিত মোটাদাগের একটি জমি জবরদখল করে চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করেন।
মানববন্ধনে ভুক্তোভোগী জমির মালিক শহীদুল্লাহ বলেন, ফায়ার সার্ভিস কল্যাণ তাহবিলের মাধ্যমে জায়গা ক্রয়ের অধিগ্রহণের নাটক সাজিয়ে আমাদের জমির কোনো মূল্য না দিয়ে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দিয়ে আমাদের জমি জবরদখল করে আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমরা অভিযোগ করতে গেলে আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
শহীদুল্লাহ আরও বলেন, বিগত স্বৈরাচারের আমলে আওয়ামী পেটুয়া বাহিনী দিয়ে আমাদের জমিগুলো জবরদখল করে। আমরা জমিতে যেতে চাইলে আমাদের ওপর অত্যাচার করা হতো। আমাদের সমস্ত কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও তারা দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে জমি দখলে নিয়েছে। আমরা আমাদের ন্যায্য মজুরির মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ দিতে চাই। আমাদের জমির মূল্য না দিয়ে এবং কোনো রেজিস্ট্রি না নিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করে বসেছে ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্সের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা। আজ দেশ স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। আমারা আশা করছি বর্তমান সরকার আমাদের আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। আমরা ন্যায় বিচার চাই। স্বৈরাচারে দোসরদের হাত থেকে মুক্তি চাই।
ভুক্তভোগী ফরমেটিভ সি আইল্যান্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ পুঞ্জিত করে জমি ক্রয় করেছি প্রোজেক্ট করার জন্য। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা বিগত সরকারের সময় আমাদের জমি জবর দখল করে নেয়। বর্তমান বৈষম্যহীন সরকারের কাছে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার ও প্রতিকার চাই।
আরেক ভুক্তোভোগী মাহবুব আলম মিনার বলন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের এসিস্ট্যান্ট ডিজি প্লানিং ইকবাল বাহারের নির্দেশে ও কক্সবাজারে দায়িত্ব থাকাকালীন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা অতিশ চাকমা ও জমির নামের এক দালাল মিলে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করার নামে প্রতারণা করে জমি দখলে নিয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এই পর্যন্ত আমরা কোনো সুরাহা পাইনি।
মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগীরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, ফায়ার সার্ভিস থেকে দাবি করা হয়েছে তারা ৪ একর ২০ শতাংশ জমি কিনেছে। বাকি অংশ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ভুক্তভোগীর দাবি ফায়ার সার্ভিস দালালের মাধ্যমে ৩ একর জমি কিনেছে। তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।
মন্তব্য করুন