প্রতিটি ঋতুতে কোনো না কোনো ফুল নিজের সৌন্দর্য গুণে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। এসব ফুল প্রকৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এমনই এক ফুল আকাশমণি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে অপরূপ সাজে। সড়কের দুপাশে ও বাড়ির আশপাশে ফোটা এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষ।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুপাশে, বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে, পুকুর, দিঘি ও বাড়ির পাশের আকাশমণি গাছে সোনালি রঙ ছড়িয়ে ফুল ফুটেছে। এসব ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য টানছে ফুল প্রেমীদের। এসব ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে নানা বয়সী মানুষের। তরুণীরা এ ফুল নিজেদের চুলের খোঁপায় বাঁধছেন পরম আহ্লাদে। এতে যেন সোনালি রঙের এ ফুলের সৌন্দর্যের সার্থকতা দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। রোদ পড়া আকাশমণি ফুলের সৌন্দর্য যেন আরও ঢের গুণ বেড়ে যায়। আসা-যাওয়ার পথে পথিকের চোখ জুড়াতে এ ফুলের যেন জুড়ি নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, শীতের কিছুদিন আগে থেকেই এই ফুল ফোটা শুরু করে। সড়কের পাশে এই গাছ বেশি, তাই সড়কের দুই পাশ সোনালি রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। আমাদের আশপাশের প্রকৃতি এই ফুলের শোভায় সুসজ্জিত রূপে সেজে উঠেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদা ইসলাম বলেন, স্বর্ণরঙা আকাশমণি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি সড়কে আসা-যাওয়ার পথে। এছাড়াও আমাদের বাড়ির পাশেও কয়েকটি আকাশমণি গাছ আছে। এসব গাছেও ফুল ফুটেছে। মনোমুগ্ধকর এসব ফুল পুরো প্রকৃতিকে রঙিন করে তুলেছে।
জানা গেছে, আকাশমণি, একাশি বা সোনাঝুরি একটি দ্রুত বর্ধনশীল চিরহরিৎ বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাকাসিয়া। এ গাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। এ গাছের ফুল সোনালি রঙের হয়। এর ফুল দেখতে খুব সুন্দর। এ ফুল শীত ও বসন্ত মৌসুমে ফোটে। পুষ্পমঞ্জরি পাতার কক্ষ থেকে উৎপন্ন হয়। মঞ্জরিতে প্রচুর মুক্ত পুংকেশর থাকে যা পুষ্পমঞ্জরিকে নির্দিষ্ট একটি আকৃতি দেয়। ফল চ্যাপ্টা হয়, পরে ফল পরিপক্ব হলে ফল পেঁচানো হয়। এ গাছ ১৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মূলত আকাশমণি গাছের কাঠ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এজন্য এ গাছ কাঠ সংগ্রহ করতে এবং সড়কের শোভা বর্ধনে লাগানো হয়।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, আকাশমণি ফুলের রেণু শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এতে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে ধুলোবালি অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে, এর সাথে আকাশমণি ফুলের রেণুও থাকে। ধুলোবালি ও এ ফুলের রেণুতে অ্যালার্জি থাকে। এ কারণে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা বেড়ে যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বা হাঁপানি রোগের রোগীদের কষ্টটা বেড়ে যায়। এ জন্য আকাশমণি ফুল ফোটার সময়টায় এ ধরনের রোগীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ও পরিবেশের শোভা বাড়াতে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। আকাশমণি গাছের ফুল দেখতে খুব সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন।
তিনি বলেন, তবে আকাশমণি গাছের ফুলের রেণু বাতাসের সঙ্গে মিশে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য আকাশমণি ফুল অসুস্থ হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই আকাশমণি ফুল ফোটার সময়টায় এ ধরনের রোগীদের মাস্ক পরিধানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন