জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে হামলা করা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন সেই ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার ইসলাম রাফি রাশিয়ায় পালিয়েছেন। তিনি ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার ২নং আসামি। রাশিয়াতে অবস্থান করে নিজের একটি ছবি ফেসবুকের মাই ডে তে শেয়ার করেছেন রাফি নিজেই।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া রাফির ওই ছবি নিয়ে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
ছবিতে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা খাকি রঙের জ্যাকেট ও প্যান্ট পরা রাফির পায়ে সাদা রঙের জুতা, গলায় মাফলার। মুখমণ্ডল জুড়ে দাড়ি। একটি কালো রঙের ল্যাম্প পোস্টের পাশে দাঁড়ানো রাফির পেছনে অনেক গাছ। সেই ছবিতে লোকেশন চিহ্ন দিয়ে ‘ভোরোনেজ, রাশিয়া’ লেখা রয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার ইসলাম রাফি সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিশ্বস্ত অনুসারী এবং পৌরসভার অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন।
মামলার নথি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে শহরের হাইস্কুল মোড়ের দিকে যায়। শিক্ষার্থীদের মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার ইসলাম রাফিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা এবং কয়েকজন আহত হয়। এসময় পিস্তল হাতে ছাত্রলীগ নেতা রাফির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট জামালপুর সদর থানার এসআই মিঠু মিয়া বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাতে প্রধান আসামি করা হয় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহান আহমেদকে এবং শাহরিয়ার ইসলাম রাফিকে ২নং আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরও তিনশ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।
শাহরিয়ার ইসলাম রাফির বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই স্টুডেন্ট ভিসা হয়েছিল রাফির। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে হামলা, মামলা ও সরকার পতনের কারণে যেতে বিলম্ব হয় তার। তবে সম্প্রতি একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রাশিয়া চলে গেছেন রাফি। সেখানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলেছে রাফি।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মীর ইশাহাক হাসান ইখলাস কালবেলাকে বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর পিস্তল নিয়ে হামলাকারী কীভাবে দেশের বাইরে চলে যায়? এটা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা।’
এসব বিষয়ে জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার যোগদানের আগে মামলাটি হয়েছে। তবুও আমি খোঁজ-খবর নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
মন্তব্য করুন