বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
আলু চাষের ধুম

সার ও বীজ নিয়ে চিন্তায় রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলেই সার ও বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলু চাষিরা। ছবি : কালবেলা
রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলেই সার ও বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলু চাষিরা। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলেই সার ও বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই আলু চাষিদের। আলু চাষের ভরা মৌসুমে হঠাৎ সারের দাম বৃদ্ধি ও ভালো বীজ সংকট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃত্রিম এই সংকটের জন্য অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন কৃষকরা। কোথাও চাহিদা মতো সার না পেয়ে ক্ষেত্র বিশেষ বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়েও সার কিনছেন অনেকেই।

কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কৃষকের সঙ্গে গ্রুপ মিটিং এবং ইয়ার্ড মিটিং করছেন তারা। পাশাপাশি পরে অনুমোদিত মাত্রার বেশি সার প্রয়োগ রোধে অব্যাহত আছে প্রচারণার কাজও।

কৃষকরা অবশ্য বলেছেন, তাদের জমিতে সার ও কীটনাশকের যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কে তাদের সচেতন করার জন্য সরকারের উদ্যোগগুলো খুব অপর্যাপ্ত। কারণ তাদের বেশিরভাগই এ সম্পর্কে কেউ অবহিত হননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ১০৬ লাখ টন আলুর মধ্যে শুধু রাজশাহীতেই উৎপাদিত হয়েছে ৭৯ লাখ টন। ২০২৪-২৫ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। তবে এ বছর আলু চাষের হিড়িক পড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গত কয়েক বছরের তুলনায় আলু ফলনের এ লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ। তবে রেকর্ড উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন চলতি মৌসুমে বীজ ও সার বরাদ্দ বৃদ্ধি করেনি। ফলে আলু বীজ ও সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত বীজ ও সারের দাম বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। তবে এ বছর আলু চাষের হিড়িক পড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় আলু ফলনের এ লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ। কৃষকের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ডিলাররা বরাদ্দ কম থাকায় তাদের কাছ থেকে প্রতি বস্তা সারের ৪৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নিচ্ছে।

তানোর উপজেলার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষের জন্য ৩০ বস্তা এমওপি, ১৫ বস্তা ড্যাপ এবং ১৫ বস্তা টিএসপি প্রয়োজন। বিসিআইসি ডিলারের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সরকার নির্ধারিত দামে মাত্র এক বস্তা এমওপি সার পেয়েছি।

একই উপজেলার আরেক কৃষক মোস্তাকিন ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আলু বীজ লাগানোর আগে তারা দুই বস্তা এমওপি, দেড় বস্তা ড্যাপ এবং আধা বস্তা টিএসপি প্রয়োগ করছি। আমরা যত বেশি সার ব্যবহার করব, মৌসুম শেষে তত বেশি ফলন পাব। আলু চাষের জন্য তাদের জমিতে কী পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগের কেউ যোগাযোগ করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি নেতিবাচক জবাব দেন।

এদিকে পবা উপজেলার বায়া বাজারের একটি বিসিআইসি ডিলারের দোকানে সরেজমিন দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দাম ১ হাজার টাকার এমওপি ১ হাজার ১৮০ টাকায়, ১ হাজার ৫০ টাকার ড্যাপ ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ১ হাজার ৫০ টাকার টিএসপি ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দোকানে কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, কৃষকের চাহিদার বিপরীতে বিসিআইসি বরাদ্দ খুবই কম হওয়ায় তারা অন্য জায়গা থেকে সার সংগ্রহ করছেন। যখন একজন কৃষকেরই ২০০ বস্তার প্রয়োজন হয়, তখন প্রতিটি ডিলারের জন্য মোট ১২০ বস্তা টিএসপি বরাদ্দ করা হয়েছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক কাওসার আলী বলেন, প্রতি বিঘা জমি আলু চাষের উপযোগী করতে ২০ থেকে ২৫ কেজি এমওপি এবং টিএসপি বা ড্যাপই যথেষ্ট। সচেতনতার অভাবে কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করছেন; যা সারের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে কৃষকদের শুধু আর্থিক ক্ষতিই হচ্ছে না, ফসলি জমির ওপরের মাটিও নষ্ট হচ্ছে, ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, আমরা কৃষকদের সচেতন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। যাতে তারা তাদের ফসলি জমিতে অনুমোদিত মাত্রার সার প্রয়োগ করতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকের সঙ্গে গ্রুপ মিটিং ও ইয়ার্ড মিটিং করছি। জমিতে যাতে অনুমোদিত মাত্রার বেশি সার প্রয়োগ করা না হয় তা নিশ্চিত করতে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কোনো ডিলার যেন কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে না পারে। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খোঁজ মিলল সহসমন্বয়ক খালিদের

আবু সাঈদ কি সত্যিই ফ্রান্সে চলে গিয়েছেন?

পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন

বাংলাদেশে এক দিনে ৪০ হাজার হিন্দু ধর্ষিত, এ তথ্য দেয়নি এবিপি আনন্দ

বিজয় দিবস কাবাডি / পুরুষ বিভাগে নৌ বাহিনী ও নারী বিভাগে পুলিশ চ্যাম্পিয়ন

সাহসীদের ক্ষেত্রে ভাগ্য সহায়ক হয়: আকবর

মাকে নিয়ে গাইলেন কাজী শুভ

বড়দিন উপলক্ষে আর্চ বিশপের হাউস পরিদর্শন সেনাবাহিনী প্রধানের

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের আহ্বান টিআইবির 

জবি ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃত্বে নূর মোহাম্মদ-শান্তা আক্তার 

১০

ভূমধ্যসাগর থেকে ৮ বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার

১১

চীনের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে পাকিস্তান

১২

ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে এনডিএফের ক্ষোভ

১৩

শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক

১৪

দেশের স্বার্থের প্রশ্নে একবিন্দু ছাড় দিতে প্রস্তুত নই : আখতার

১৫

যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের হুঙ্কার

১৬

নির্বাচন নিয়ে এত টালবাহানা কেন, প্রশ্ন ফজলুর রহমানের

১৭

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা যাতে আর দেশে না আসতে পারে : মেজর হাফিজ 

১৮

বিচার চেয়ে সোহেল তাজের স্ট্যাটাস

১৯

সিরিয়ায় বিমান চলাচল স্থগিত করল ইরান

২০
X