লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী এ নির্দেশ নেন।
একই আদেশে সম্পত্তি যাতে ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারে এজন্য মহাপরিদর্শক নিবন্ধন ও লালমনিরহাট জেলা রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ প্রদান এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সম্পত্তির রিসিভার নিযুক্ত করেন।
জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ মণ্ডল বাদী হয়ে এক সাংবাদিকসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। গত ১১ নভেম্বর রাতে লালমনিরহাট থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিস্তা সেতুর টোল প্লাজা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় লালমনিরহাট জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও তাকে আরও একটি মামলায় আরও ৩দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে সুমন খানের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পরে ৫টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। হত্যাসহ তার নামে মোট ১৬টি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের।
এছাড়াও গত অক্টোবরে সুমন খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দুইশ একচল্লিশ কোটি ঊননব্বই লাখ বিশ হাজার সত্তর টাকা উপার্জন করে ব্যাংকে রাখায় সিআইডি লালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক, স্বর্ণ পাচার, হুন্ডি ব্যবসা আর হুমকি-ধামকিতে ১৫ বছরে কয়েকশ কোটি টাকা কামিয়েছেন লালমনিরহাটের আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান। পেটোয়া বাহিনী গড়ে তুলে হয়েছিলেন অপরাধ চক্রের গডফাদার। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সুমনের ব্যাংক হিসাবে মিলেছে মোট ৪৬৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য।
সুমন খান ছিল লালমনিরহাটবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু করেন মাদক, ভারতীয় গরু চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা। ২০০১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে বিএনপিতে যোগ দেন সুমন। ২০০৯ সালে পুনরায় ফেরেন আওয়ামী লীগে। নানা অপকর্ম করে গত ১৫ বছরে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।
সম্প্রতি সুমন খানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য পায় সিআইডি। যার মধ্যে ১৮৬ কোটি টাকার সন্ধান মেলে তার কর্মচারী তৌকির আহমেদ মাসুমের ব্যাংক হিসাবে। পরে মামলা করে সিআইডি।
লালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার জানান, সিআইডির মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় আসামি সুমন খানকে বিজ্ঞ আদালত ১৭ নভেম্বর শ্যোন অ্যারেস্ট মঞ্জুর করেন। ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ দিনের সিআইডি কর্তৃক পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। এরপর গত ১ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালত তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, সম্পত্তি ক্রোক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রিসিভার নিয়োগ করে আদেশ দেন।
মন্তব্য করুন