সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে কালবেলা, আরটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত ফটোকার্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কামারখন্দের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কামারখন্দ প্রেস ক্লাবের হলরুমে গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে সমন্বয়ক মুমিত সেখ, সাকিব মাহবুব, সাগর আহমেদ কথা বলেছেন।
সমন্বয়ক সাগর আহমেদ বলেন, গত ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত কালবেলা, আরটিভিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল যে, ওমরাহ ভিসা-পাসপোর্ট থাকায় পাসপোর্ট-ভিসা ফিরিয়ে দিলেন ছিনতাইকারীরা, আসলে বিষয়টি এমন না। সেদিন রাতে যা ঘটেছিল- দিনাজপুর থেকে এক ভাই ও তার মা ঢাকায় যাচ্ছিলেন ওমরাহ হজের উদ্দেশ্যে। তাদের ট্রেনটি যখন জামতৈল স্টেশনে আসে, তখন তাদের ব্যাগটি ট্রেনের ভেতর থেকে ছিনতাই হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় কামারখন্দ থানা গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
তিনি বলেন, পরে সেটি উদ্ধার করার জন্য কামারখন্দ থানার একটি টিম সার্কেল এসপিসহ কামারখন্দের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে ও স্থানীয় কিছু যুবকরা মিলে একটি টিমে পরিণত হয় এবং একটি উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। এরপর একটি বিশেষ অভিযানে সেই ছিনতাই হওয়া বা খোয়া যাওয়া পাসপোর্ট-ভিসা উদ্ধার করতে সক্ষম হই। কিন্তু পরবর্তীতে সে নিউজটি কালবেলা, আরটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটির শুধু হেডিং দেখেই অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করতে থাকে। নিউজে বলা হয়েছে- হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিল ছিনতাইকারীরা, সেখানে ছবি ছিল- আমাদের তিনজনের সঙ্গে ছিল কামারখন্দ থানার ওসিসহ জামতৈলের স্থানীয় এক ভাই।
তিনি বলেন, এখানে কেউই ছিনতাইকারী না বা কেউই ওই ধরনের কোনো মানুষ না। এখানে শুধু একটি ভুল তথ্য বা নিউজের জন্য অনেক মানুষ অনেকভাবে বিষয়টি দেখছেন। আসলে আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করি, কালবেলা ও আরটিভিসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে যে নিউজটি হয়েছে সবই সঠিক নিউজ। আপনারা যদি ভেতরে যান, তাহলে সব তথ্য পেয়ে যাবেন। কালবেলাসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূল অভিযানসহ সবকিছু ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক মানুষ শুধু হেডিং দেখেই বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েছেন, বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে ভালো বা পরামর্শ মন্তব্য করেছেন। এখানে ছিনতাইকারী কে বা কে ভুক্তভোগী বোঝা যাচ্ছে না। সে জায়গা থেকে বিষয়টা আমি ক্লিয়ার করি, ওখানে কোনো ছিনতাইকারী ছিল না বা ছিনতাইকারী ফিরিয়ে দিয়েছে এমন না।
তিনি আরও বলেন, যখন ব্যাগটি হারিয়ে যায় তখন ব্যাগের ভেতর ফোন, পাসপোর্ট, ভিসা ও নগদ টাকা ছিল। ব্যাগে যে ফোনটি ছিল প্রথম থেকেই ওই ফোনে অনেকবার কল দিয়ে চেষ্টা করা হয়। একটা পর্যায়ে গিয়ে ফোনটা আমরা খোলা পাই। অপর পাশ থেকে একজন ফোন রিসিভ করে এবং সে জানায় ব্যাগটি সে একটা জায়গায় পেয়েছে ব্যাগের ভেতর নগদ অর্থ নেই শুধু পাসপোর্ট এবং এই ফোনটা ছিল। একটা সময় যখন তাকে আমরা বুঝিয়ে বলি মা-ছেলে ওমরাহ করতে যাবে এবং আগামীকালই তাদের ফ্লাইট। তখন সে ব্যাগটি ফিরিয়ে দিতে সম্মতি জানায়। তারপরও তারা আমাদের সামনে আসেনি। তারা আমাদের ফোনেই একটি বিশেষ স্থানে বা নিরাপদ স্থানে পাসপোর্ট ও ভিসা রেখে যাবে এবং পরবর্তী সময় আমাদের জানিয়ে দেয়। এখন আমরাও বিষয়টি শিওর না যে, আসলে সে-ই ছিনতাইকারী, নাকি অন্য কেউ। যদিও সে আমাদের সামনে আসেনি এবং সে ফোনটাও ফিরিয়ে দেয়নি। যেহেতু বিশেষ কারণবশত তিনি পরের দিনই ওমরা হজে যাবেন, সেক্ষেত্রে কামারখন্দ থানার টিমের মাধ্যমে এবং আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ও কিছু সাংবাদিক এবং এলাকার কিছু ভাইয়ের মাধ্যমে সেটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই। কিন্তু মূল বিষয় হলো, বিষয়টি পরবর্তীতে এমনভাবে নিউজ করা হয় যে মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারণার জন্ম হয়, এই ভুল ধারণা নিয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ট্রল করছে, আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।
সমন্বয়ক সাগর আহমেদ বলেন, আসলে এখানে ভুল কারোরই না। তারা যদি ছবি বিবেচনা করে হেডিং দিত তাহলে মনে হয় এমনটা হতো না। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের মাঝে যে ভুল ধারণা হয়েছে- ছিনতাইকারীরা পাসপোর্টটি ফিরিয়ে দিল, বিষয়টা আমাদেরই ইন্ডিকেট করা হচ্ছে- এ বিষয়টাই আমরা আপনাদের ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। আপনাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারা কেউ এ বিষয়টি নিয়ে হাসি বা মজা বা ট্রলের শিকার বানাবেন না বা করবেন না। আমরা চাই আমাদের যুব সমাজ খুব সচেতন, তারা বিভিন্নভাবে মানুষের বিপদে সহযোগিতা করে বা পাশে থাকে।
সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, কিছু কিছু নিউজের কারণে এখন অনেকের কাছে সাংবাদিকরা হাসির পাত্র হয়ে গেছেন। আপনারা এমন নিউজ করবেন না, যার কারণে আপনার পত্রিকার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুণ্ন হয়। মানুষ আপনাদের সম্মানের চোখে দেখে। যে কোনো নিউজ করার আগে আপনারা সত্য-মিথ্যা যাচাই করবেন, তারপর নিউজ করবেন। আপনারা নিউজের হেডিংটা দেখবেন এটি কোনো লোকের বিরুদ্ধে গেল কিনা বা ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কিনা বা বিভ্রান্তির জন্ম দেয় কিনা। কারণ বর্তমান প্রজন্ম এখন সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক। আমাদের অনেকেই যারা ভেতরে গিয়ে কম পড়ে তারা হেডিং দেখেই বিষয়টি জাজ করে ফেলে। দেখবেন আপনারা যে বিষয়ে নিউজ করেন আপনাদের হেডিং যেন ঘটনার সাথে সামঞ্জস্য হয়। যেমন এ ঘটনাটা আপনারা সঙ্গে থেকে উদ্ধার করেছেন কিন্তু এমনভাবে দিলেন আপনারাও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন, আমরাও মানহানির ভেতরে পড়েছি। আসলে আমাদের যারা চেনে, তারা জানে যে আমরা কেমন, আমরা কোন ঘরের সন্তান বা কেমন আমাদের চলাফেরা কিন্তু যারা চেনে না তারা বিভিন্ন ট্রল করছে বা বিভিন্ন মহল এটার একটা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই জায়গা থেকে আমরা আপনাদের এটি অনুরোধ করবো- আপনারা নিউজ করবেন এবং জানবেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই জিনিসটা ছিনতাইকারী ফিরিয়ে দেয়নি। কামারখন্দ থানার একটি বিশেষ টিম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মিলিত অভিযানে এটি উদ্ধার করা হয়েছে। আপনারা হেডিং দেখেই কোনো মন্তব্য করবেন না। কমেন্টে লিংক দেওয়া থাকে, বিস্তারিত পড়ে তারপর মন্তব্য করবেন। দেখা যায় যে, আপনার একটা মন্তব্য একটা মানুষের সম্মান হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন