বান্দরবানে থানচি উপজেলায় স্বাস্থ্যক মপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে একজন চিকিৎসক দিয়ে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যোগদান করার কথা থাকলেও এখনো আসেননি তিনি। মেডিকেল অফিসারের চারজনের মধ্যে দুজন বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রেসনে, আরেকজন ছুটিতে রয়েছেন। ফলে বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত আছেন মাত্র একজন ডাক্তার। এতে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
রোগীর চাপ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তৎকালীন সরকার ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নীত করলেও চিকিৎসাসেবায় হয়নি কোনো উন্নতি। হাসপাতালে রয়েছে শুধু এসিজি, নেবুলাইজার ও ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার, ওটি ও প্যাথলজি, এক্সরে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি না থাকার ব্যাহত হচ্ছে জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে রেফার করতে হয় জেলা সদর হাসপাতালে।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। জটিল কিছু রোগ হলে বান্দরবান সদরে রেফার করা হয়। এত বড় ভবন আর হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক সংকট। এ ছাড়া হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। বর্তমানে শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বান্দরবান সদরে প্রাইভেটে হাসপাতালে দেখাতে হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত য়ংরাও ম্রো (৩৩) বলেন, আমি মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে পায়ে আঘাত পেয়েছি। থানচি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন না থাকায় আমাকে বান্দরবানে রেফার করা হয়েছে।
উম্যাসাই মারমা (১৬) বলেন, আমি সকালে পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছি কিন্তু কোনো পরীক্ষা করার বা জটিল রোগের চিৎকিসক না থাকায় আমাকে বান্দরবানে রেফার করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র নার্স লালসাংপার বম মুঠোফোনে বলেন, পাহাড়ে শীত আগমনে এখন সবাই বিভিন্ন রোগের ভুগছে। বিশেষ করে জ্বর, পেট ব্যথা, ভাইরাস ও শিশুদের নিউমোনিয়া রোগসহ অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদ্দুজামান মুরাদ বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার, ওটি ও প্যাথলজি, এক্সরে মেশিন ও আলট্রাসনো মেশিন আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি কেনার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে একটি বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার এখনো কোনো খবর নেই।
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুব রহমান বলেন, থানচি থেকে দুজন চিকিৎসক জেলা সদরে প্রেসনে রাখছি। তাদেরকে ফেরত পাঠানো সম্ভব না। পাঠানো হলে বান্দরবান হাসপাতাল অচল হয়ে যাবে। আপাতত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা থেকে একজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। তিনি দ্রুত যোগদান করবেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে শুরু হয় থানচি হাসপাতাল। ১৯৯৮ সালে ৩১ শয্যা উন্নীতকরণ হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ২০১৯ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি জনবল।
মন্তব্য করুন