দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় নাহিদুর রহমান। বাবা-মায়ের বড় ছেলে হওয়ায় সব স্বপ্ন তাকে ঘিরে। পড়ছেন ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের বিবিএস প্রথম বর্ষে। একমাত্র ছোট ভাই জুনায়েদুর রহমান ফেনী সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সে পড়ছেন। ছোট বোন নাসরিন আক্তার স্বর্ণা নাসির মেমোরিয়াল কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।
গত ৫ আগস্ট ফেনীর ট্রাঙ্ক রোডে সরকার পতনের বিজয় মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে ডান চোখে গুলি লেগে চোখ হারান নাহিদ। বাম চোখের অবস্থাও সংকটাপন্ন। যেই বয়সে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরার কথা, সে সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার শরীর ও চোখ নয়, পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ফলে বাবা-মা, ভাই ও বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় নাহিদ।
ফেনী সদর উপজেলাধীন ১৭ নম্বর পৌর ওয়ার্ডের রামপুর পাটোয়ারী বাড়ির নুর মিয়া ভিলার বাহার মিয়ার ছেলে নাহিদ। বাবা ফেনীর একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার। সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যে তিন সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে ছেলের চোখ হারানোর ঘটনায় মুষড়ে পড়েন নাহিদের বাবা বাহার মিয়া।
তিনি জানান, গত ৪ ও ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে ছেলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু ৫ তারিখে সরকার পতনের খবরে বিজয় মিছিলে বের হলে তাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নাহিদ গুরুতর আহত হয়। ৪৫টি স্লিপিন্টারে ঝাঁঝরা হয়ে যায় নাহিদের শরীর। যার একটি এসে নাহিদের ডান চোখে লাগে, সঙ্গে সঙ্গে রক্তাত্ত হয়ে যায় চোখ। এখনো ডান চোখে সে দেখে না। ডাক্তাররা বলেছেন যদি বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করতে পারেন তবে চোখ ভালো হতে পারে।
নাহিদের ভাই জুনায়েদুর রহমান জানান, ভাইয়া ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হলে আমরা তাকে দ্রুত স্থানীয় উপশম হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে ডাক্তাররা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। ওখানে ডাক্তাররা বোর্ড বসিয়ে জানান, এখানে চোখের রেটিনা চিকিৎসা নেই, পরে সেভরন হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভর্তি করি। সেখানেও চোখের সুচিকিৎসা না হওয়ায় আমরা ভাইয়াকে ঢাকার ভিশন আই হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ডাক্তার মনিরুজ্জামান ও আবির বিন সাজের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। তারা ভাইয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রনালয়ে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। কিন্তু আমার দরিদ্র পিতার পক্ষে এতবড় ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি এ জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নাহিদ জানান, ফ্যাসিবাদী সরকার হটাতে এত কিছু করলাম; কিন্তু এখন আমার পাশে কেউ নেই। আমি আমার শরীর ও পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকার যদি আমার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাকি চোখও অন্ধ হয়ে যাবে। আমার দরিদ্র পিতার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ফেনী জেলা ছাত্র সমন্বয়ক ওমর ফারুক শুভ কালবেলাকে জানান, নাহিদ আমাদের সহযোদ্ধা, তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব নাহিদকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হাসান কালবেলাকে জানান, আমরা ছাত্র আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নাহিদের সুচিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। নাহিদের যাতে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মন্তব্য করুন