সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা দেশের অন্যতম হাওর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বর্ষার পানিতে প্লাবিত এই এলাকার মাটিতে সোনালি ধানের গল্প যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে আছে। কৃষিকাজ এখানকার প্রধান জীবিকা। শীতের শুরুতে কৃষকদের ব্যস্ততা তুঙ্গে, কারণ এ সময় চলছে বোরো মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরির কাজ। গত বছর বোর ধানের ভালো ফলন হওয়ায় এবার কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে।
গ্রামের হাওর পাড়ে গেলে দেখা যায়, কৃষকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বীজ তলায় পানি দিচ্ছেন, কেউ জমির আইল ঠিক করছেন, কেউ মাটি কাটছেন, কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে বীজতলা খননসহ ধানের বীজ রোপণের প্রতিটি ধাপ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবার বোরর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকরা অধিক লাভের আশায় উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন। এবার উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বীজ শক্তি-১, শক্তি-২, জলক, জলক রাজ, অগ্রণী, ব্রি ধান- ৯২, মিতালী, মিতালী-৪, ইস্পাহানী, ব্রি ধান-৯৬ এসব বীজ ব্যবহার করছেন। হাইব্রিড জাতের ধানের উৎপাদনক্ষমতা বেশি হওয়ার পাশাপাশি এর বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যায়। কৃষকরা আশা করছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ২৩টি হাওরে ১৭ হাজার ৪৩৯ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার জন্য বীজতলা তৈরি হবে ৮৫৮ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে ১০৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। শনি, মাটিয়ান, আঙ্গারউলি, ফানা, মহালিয়াসহ সব হাওর পাড়ের কিষান-কিষানি এখন ব্যস্ত রয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হবে আর বোরো ধান রোপণ মৌসুম শুরু হবে।
শনির হাওর পাড়ের গৌবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক আহমদ উল্লাহ জানান, গতবার ৮কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার) জমি চাষ করেছিলাম। এবছর ১১কিয়ার জমির জন্য বীজতলা তৈরী করছি। এসব জমিতে শক্তি-৩, ইস্পাহানী ও ব্রি ধান-৯৬ ব্যবহার করছি। অন্যান্য বীজের তুলনায় হাইব্রিড বীজের দাম বেশি হলেও এবার সবাই এই বীজেই ব্যবহার করছে। হাইব্রিড বীজের ফলন ভালো এবং আগে ফলে।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের রতনশ্রী গ্রামের কৃষক মনশাদনুর জানান, আমরা এখন বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত। বোরো ধানের ফলন ভালো করতে হলে শুরুতেই ভালো বীজতলা দরকার। এখন যে বীজতলা করছি, সেখান থেকেই মাসখানেক পরে ধানের চারা তুলে জমিতে লাগাব।
তিনি আরও জানান, এবার আমি ৮কিয়ার জমি চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। ৮ কিয়ার জমির বীজতলার জন্য উচ্চ ফলনশীল ১২ প্যাকেট অগ্রণী জাতের বীজ সংগ্রহ করেছি। হাইব্রিড বীজে ফলন ভালো হয় এবং দ্রত ফসল কাটার উপযোগী হয়ে যায়।
শনির হাওরপাড়ের আরেক কৃষক মিল্লাদ হোসেন জানান, আমাদের জমিতে গত বছর বিএডিসির ১০ কেজি বীজের বস্তা লাগিয়েছি ১৮টা এবং মিতালী-৪ লাগিয়েছিলাম ৫ কেজি। মিতালী-৪ এর ফলন ভালো হওয়ায় এবার মিতালী-৪ নিয়েছি ১৪ প্যাকেট (এক কেজি প্রতি প্যাকেট) এবং বিএডিসির ১০কেজি বীজের বস্তা ৪টি। আর শক্তি-২ এনেছি ৫ প্যাকেট। এবার শক্তি-২ বেশি নিচ্ছে কৃষকরা। বিএডিসির বীজ সময়মতো না পাওয়া ও ফলন কম হওয়ায় এখন সবাই হাইব্রিড বীজের প্রতি ঝুঁকছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এবার যথা সময়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছেন রোপণ মৌসুমও যথাসময়ে শুরু হবে। এবার উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য মাঠপর্যায়ে আমাদের লোকজন কাজ করছে।
মন্তব্য করুন