শেরপুরের মুর্শিদপুরে খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) হামলার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে হাফেজ উদ্দিন মারা যান।
তিন সন্তানের জনক নিহত মো. হাফেজ উদ্দিন (৪০) শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কান্দাশেরীরচর গ্রামের মো. ইদু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ভোরে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৩ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।
নিহত হাফেজ উদ্দিন দরবারে হামলাকারী পক্ষের লোক ছিলেন। গুরুতর আহত হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে নেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি ছিল। সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলামসহ স্থানীয় কওমি মাদ্রাসাপন্থিদের দাবি, দরবারে শিরক ও বিদায়াতি কর্মকাণ্ড হয়। ইসলাম এমন কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। এসব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েকবার আলোচনাসভা হয়। এ ছাড়াও মাদ্রাসা ও লছমনপুর এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি-বিক্ষোভ সমাবেশও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মুরশিদপুর পীরের দরবারে ইসলাম ধর্ম ও শরিয়ত পরিপন্থি কর্মকাণ্ড চলে আসছে। আমরা এমন কাজ বন্ধ করতে অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু চলমান সংকট সমাধানে কথা বলে দরবারে ডেকে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে পীরের লোকজন। ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাফেজ উদ্দীন মারা গেছেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দরবারের খাদেম মো. ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, তারা শেষ রাতে এসে অতর্কিতভাবে হামলা করে ও ডাকাতি করতে আসে। আমরা ভেতরে ১০-১৫ জন ছিলাম। পরে মাইকে ঘোষণা দিলে এলাকার লোকজন আসেন। পরে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম বলেন, এরইমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ৭ জনকে আটকও করেছি। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। আমাদের আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
মন্তব্য করুন