দাবি আদায়ে এবার সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিলেটের চা-শ্রমিকরা। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৯টায় সংগঠনটির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেটের খাদিম চা-বাগানে মিছিল- সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই ঘোষণা দেন তারা।
সংগঠনের আহ্বায়ক এবং খাদিম চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা সবুজ তাঁতির সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সংগঠক মনীষা ওয়াহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন খাদিম বাগানের চা-শ্রমিকনেতা রহিমা খাতুন, সমন্বয়ক এস এম শুভ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সিলেট কমিটির সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১০ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ না করায় ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা-বাগানের শ্রমিকদের পরিবার দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি বাগানের ১৬ হাজার চা-শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি মালিকানাধীন বাগান হওয়া সত্ত্বেও এত দিন অতিবাহিত হলেও মজুরি পরিশোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যদি অনতিবিলম্বে চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে বাগান চালু করা না হয়, তাহলে হাজার হাজার চা-শ্রমিককে নিয়ে ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
তারা বলছেন, চা-শ্রমিকের মজুরি শ্রম আইন ও গেজেট অনুযায়ী ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ সাড়ে আট টাকা বৃদ্ধি করা হলেও এখন পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে মূল মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ২০২৩-২৪ সালে চা-শ্রমিকদের মজুরি বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে মালিকদের টালবাহানা সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে সংগঠনের সমন্বয়ক এস এম শুভ বলেন, চা-শ্রমিকদের ২০২৩-২৪ সালের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ২০২১-২২ সালের বকেয়া মজুরি ২০ হাজার টাকাও পরিশোধ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে উপার্জিত টাকা মালিকদের আত্মসাৎ করতে দেওয়া হবে না।
সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, পৃথিবীর শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের অংশ চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই। যুগে যুগে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেই শ্রমিকরা অধিকার আদায় করেছেন। চা-শ্রমিকরাও মজুরি বৃদ্ধিসহ নাগরিক অধিকার আদায়ে লড়ছেন। সেই লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা আপনাদের পাশে আছে। এ লড়াইকে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে পরিণত করতে হবে।
সংগঠনের আহ্বায়ক সবুজ তাঁতি বলেন, চা-শ্রমিকদের প্রতিটি লড়াইয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বকেয়া মজুরি আদায়ে ঢাকায় শ্রম ভবন ঘেরাও, গেজেট বাতিল, মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকদের সংকট নিরসনে আমাদের সংগঠন নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বাগানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ত্রাণ সহযোগিতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
চা-শ্রমিকদের মুক্তির সনদ ১০ দফা বাস্তবায়নের সংগ্রামকে বেগবান করার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি বাগানের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল বুধবার (২৭ নভেম্বর)। ২০২২ সালের ওই দিনে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত কনভেনশনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।
মন্তব্য করুন