রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক রায়হানের ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে। তার মায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর নাম রেজাউন-উল হক তরঙ্গ (২৭)। তার বাবা রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা রাহেনুল হক। রাহেনুল সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সোমবার আদালতে তার জামিন হয়। তরঙ্গের মা নার্গিস খাতুন চারঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজশাহী শহরের কিছু ছাত্রদলের নেতাকর্মী তার ছেলেকে কারাগারের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় যুবদল নেতা মোমিনসহ কয়েকজন। তারা নার্গিসকে আশ্বস্ত করছেন যে, যারা তরঙ্গকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তারা তরঙ্গকে ছেড়ে দেবে।
কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন নগরের রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম। নার্গিস খাতুন ওসিকে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তার স্বামী অসুস্থ। এ কারণে সোমবার আদালতে তার জামিন হয়েছে। সন্ধ্যার পর কারাগার থেকে বের হওয়ার কথা ছিল।
এ জন্য সন্ধ্যার পর তিনি, তার ছেলে তরঙ্গ, তাদের আত্মীয় আবেশ ও তাদের আইনজীবী কারাগারের সামনে আসেন। কিন্তু কারাগারের সামনে বসার জায়গা না পেয়ে তিনি ও আবেশ পাশের মোড়ের দিকে যান। আর কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন তার ছেলে ও আইনজীবী। ওই সময় ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী এসে তাদের আইনজীবীকে মারধর করে তরঙ্গকে তুলে নিয়ে যান। এরপর নার্গিস খাতুন ছেলের মোবাইলে কল দেন। তখন তরঙ্গ তার মা নার্গিসকে জানান, তাকে কারাগার সংলগ্ন পদ্মা নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সে সময় তরঙ্গ তার মাকে জানান, তার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। তার মা যেন দ্রুতই এই টাকা ম্যানেজ করেন। নার্গিস খাতুন ওসিকে আরও জানান, কিছুক্ষণ পর কারাগারের সামনে যুবদল-ছাত্রদলের কয়েকজন আসেন। তারা তাদের এক আত্মীয়ের পরিচিত। ছাত্রদল-যুবদলের এই নেতাকর্মীরা তরঙ্গকে উদ্ধারে মধ্যস্থতা করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তরঙ্গকে লালন শাহ মুক্তমঞ্চ এলাকায় তার এক মামাত ভাইয়ের কাছে দেওয়া হয়। ওই মামাত ভাই তরঙ্গকে নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ি নিয়ে যান।
জেল থেকে বেরিয়েই গ্রেপ্তার সাবেক এমপি রাহেনুল হক জানান, তুলে নেওয়ার পর তার ছেলেকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়নি। ছাত্রদল-যুবদলের কয়েকজনের মধ্যস্থতার কারণে মুক্তিপণও দেওয়া লাগেনি।
তুলে নেওয়ার ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করবেন কিনা জানতে চাইলে নার্গিস খাতুন বলেন, অভিযোগ আর কাকে দেব। কাউকে অভিযোগ দেব না। আল্লাহর কাছেই বিচার দেওয়া থাকল।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তরঙ্গ ছাত্রলীগ করত। সে কারণে স্থানীয় কিছু ছেলে তাকে আটকেছিল যে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। আমরা ছেলেটাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি।
রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, কেউ বিষয়টি আমাদের পুলিশ কমিশনার স্যারকে জানান। সেখান থেকে খবর পেয়ে আমি কারাগারের সামনে গিয়ে তরঙ্গের মা নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এর মধ্যেই নার্গিসের মোবাইলে কল আসে যে তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন