সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী হাসান মিয়া (২৮) হত্যা মামলায় বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সিলেট জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বালাগঞ্জ উপজেলার হাসামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মবশ্বিরের ছেলে আব্দুস সবুর পুতুল, তার ছেলে ফাহাদ আহমদ রাহী ও আব্দুল মোমিন রনি। দণ্ডিত পুতুল কারাগারে থাকলেও তার দুই ছেলে রাহী ও রনি পলাতক রয়েছেন।
বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের পেশকার মো. সোহেল রানা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, খুন হওয়া হাসান মিয়া বালাগঞ্জের হাসামপুর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি নিজ গ্রামে হাসান ফার্মেসি অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ স্টোর নামে একটি দোকান চালাতেন। ২০১৮ সালে রমজান মাসে হাসামপুর গ্রামের বায়তুননুর জামে মসজিদে তারাবির নামাজের পর মুসল্লিদের বিনামূল্যে লিচুর জুস পান করাতেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ফারুক মিয়া। প্রতিদিন হাসানের দোকান থেকে নগদ টাকা দিয়ে জুসের বোতল কিনে মুসল্লিদের মাঝে সরবরাহ করা হতো। ২০১৮ সালের ২২ মে রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে ফারুক মিয়া জুসের দাম বাবদ ৫ হাজার টাকা একই গ্রামের যুবক ফাহাদ আহমদ রাহীর মাধ্যমে হাসানের দোকানে পাঠান। রাহী সেই টাকা হাসানের কাছে দিয়ে চলে যান।
আবার আধঘণ্টা পর রাহী ফিরে এসে হাসানকে জানান, ‘জুস লাগবে না, টাকা ফিরিয়ে দাও।’ হাসান উত্তরে জানান, ‘টাকা ফেরত দিতে হলে ফারুক মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে অন্য আসামিরা ঘটনাস্থলে আসেন। একপর্যায়ে তারা ব্যবসায়ী হাসানকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। রাহী এ সময় উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন হাসানকে। তার আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় আসামিরা। স্থানীয়রা হাসানকে উদ্ধার করে প্রথমে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় হাসানের ছোট ভাই হোসাইন আহমদ সাহান (২৪) বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ২৩ মে বালাগঞ্জ থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
আদালত থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট পিবিআইয়ের এসআই সুদীপ দাস তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ১১ জুন আদালতে বিচারকার্য শুরু হয়। মামলার ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক সোমবার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মূল ঘাতক রাহীর পাশাপাশি তার বাবা আব্দুস সবুর পুতুল ও ভাই রনিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন