বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তার অনুসারীরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়স্থ ধর্মসভা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে টাউন হল ঘুরে পুনরায় সেখানে ফিরে আসে।
এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পথচারীদের ধস্তাধস্তি হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ও মহানগর পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন। পরে তারা জাহাজ কোম্পানি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
জীবন কুমার রায় নামের একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। এত ৪-৫ জন আহত হয়েছেন। আমরা চিন্ময়ের নিঃশর্ত মুক্তি ও আমাদের ওপর হামলার ন্যায়বিচার চাই।’
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘সনাতনীরা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছে বলে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এর আগে আজ বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল চিন্ময়ের। সে সময় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা দায়ের হয়। মামলার পরই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
মামলার আসামিরা হলেন পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) এবং হৃদয় দাস (২৫)। একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। এ ছাড়া তিনি পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ৮ দফা দাবিতে রংপুর বিভাগীয় মহাসমাবেশ করে সনাতনী জাগরণ জোট।
মন্তব্য করুন