নওগাঁর মান্দায় ১০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই ডাক্তার। এসব কেন্দ্রে বছরের পর বছর ডাক্তারদের পদ শূন্য থাকায় রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট ও পরিদর্শকরা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আয়া, পিয়ন পদ খালি থাকায় সকল ধরনের সেবা কার্যক্রম থেকে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। অনেক সময় রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) উপজেলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, কাশোঁপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র একটি কক্ষে বসে রোগী দেখছেন এক নারী। দুটি বেঞ্চে কয়েকজন রোগী বসে আছেন। ভেতরে ঢুকে জানা গেল, তিনি চিকিৎসক নন, পরিদর্শিকা। তার নাম মোছা.রেহেনা পারভীন। অন্যদিকে নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিসপেনসারি কক্ষে বসে রোগীর দেখছেন এক ব্যক্তি। ভেতরে ঢুকে জানা গেল তিনিও চিকিৎসক নন, ফার্মাসিস্ট। তার নাম মো. মোস্তাক আহম্মেদ। এ ছাড়া অন্যান্য কক্ষে ঝুলছে তালা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। এসব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, একজন পিয়ন ও একজন আয়া পদ থাকার কথা। কিন্তু ১০টি ইউনিয়ন কাশোঁপাড়া, প্রসাদপুর, গনেশপুর, পরাণপুর, ভারশোঁ, কালিকাপুর, মান্দা, ভালাইন ও নূরুল্যাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, আয়া ও পিয়ন নেই। অন্যদিকে কশব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকল পদ শূন্য রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র জনবল না থাকায় কার্যক্রম চলছে ফার্মাসিস্ট ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়ে।
চিকিৎসা নিতে আসা নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নে রামনগর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বলেন, অসুস্থ হলে প্রায়ই এই কেন্দ্রে ওষুধ নিতে আসি। কে ডাক্তার, কে ফার্মাসিস্ট এসব বুঝি না। তারা আমাকে দেখে ওষুধ দেয় এবং যেভাবে খাওয়ার পরামর্শ দেয় তা মেনে চলি।
রোগী দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে কাশোঁপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিদর্শিকা রেহেনা পারভীন বলেন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, আয়া ও পিয়ন না থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রোগীদের চিকিৎসা, ওষুধ দেওয়াসহ সকল সেবা কার্যক্রম আমাকে একাই করতে হয়। এতে বেশ সমস্যায় ভুগছি।
নূরুল্যাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মো. মোস্তাক বলেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫টি পদ থাকলেও বর্তমানে আমি একাই কর্মরত আছি। যেখানে আমার কাজ ওষুধ দেওয়া কিন্তু রোগী দেখার কথা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের। তিনি না থাকায় রোগীকে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দুটোই আমাকে করতে হচ্ছে। এতে সেবা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক ডা. ইকরামুল বারী টিপু (এমবিবিএস) বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান যে আইন ও বিধিবিধান রয়েছে তাতে একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তার ছাড়া প্রেসক্রিপশন লেখার অথরিটি নেই। গ্রামের গরিব দুঃখী অসহায় মানুষ এসব কেন্দ্রে সেবা নিতে যায়, সঙ্গত কারণেই ডাক্তার না থাকায় ফার্মাসিস্ট বা অন্য পদে যারা রয়েছেন, তারা যদি চিকিৎসা দিয়ে থাকে তা যুক্তিসঙ্গত নয়।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.আব্দুর রহমান প্রামানিক বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কথা জানিয়ে অনেকবার স্বাস্থ্য বিভাগে চাহিদা দিয়েছি। তারপরও পূরণ হয়নি শূন্য পদগুলো। অনেক বছর ধরে জনবল নিয়োগ না থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য সহকারীরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্তব্য করুন