টিসিবির পণ্য বিক্রয়ে অনিয়ম তদারকি করতে গিয়ে আশিক নামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সদস্যকে হামলা চালিয়ে আহত করেছে কিছু দুর্বৃত্ত। এ সময় তার পাশাপাশি হযরত নামের অপর এক ব্যক্তিকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপিতে পশ্চিম পাড়ার মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মৃত কাদা মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম, বানির ছেলে শাকিল, মৃত লিটনের ছেলে রাব্বি, ইউপি সদস্য হাফিজ, শোভন, রিজভী ও লিটন জোটবদ্ধ হয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আমঝুপি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কয়েক মাস ধরে টিসিবি কার্ডের পরিবর্তে পছন্দের লোকজনকে স্লিপ দিয়ে টিসিবি পণ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছিল। জেলা প্রশাসক বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে টিসিবি পণ্য বিতরণ সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আবার টিসিবি পণ্য বিতরণ শুরু হয়। আর ছাত্রদের পক্ষ থেকে একজন বিষয়টি তদারকি করতে এলে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত হযরত বলেন, আমি পেশায় একজন ড্রাইভার। মাঠে ঘাস আনতে যাওয়ার সময় টিসিবি পণ্য দিচ্ছে দেখে সেখানে জিজ্ঞাসা করতে যাই আমাদের কবে দেওয়া হবে। বিষয়টি আমি জিজ্ঞাসা করে চলে আসার সময় আশিক আমাকে বলে একটু দাঁড়িয়ে যান- ইউএনও সাহেব আসছেন। তখন আমরা একটি চায়ের দোকানে বসি। ইউএনও সাহেব আসার পর আমরা তার কথা শুনছি এমন সময় শফিকুল মিয়া আমার টুঁটি চেপে ধরে আমাকে বলে, ভালো হয়ে যা। তখন আমি বলি- আমার অপরাধ কী। বিষয়টি আমি ইউএনওকে বললে তিনি বলেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর পর পরই আমাকে মারধর শুরু করে।
আহত ছাত্র আশিক বলেন, আমি ঘটনাস্থলে টিসিবির পণ্য বিতরণ তদারকি করতে গিয়ে দেখি সাইফুল চেয়ারম্যান, শফিকুল ও রাব্বি ওখানে ছিল। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আহ্বায়ক ইমতিয়াজকে ফোন দেই। ইমতিয়াজ আমাকে ইউএনও যাওয়ার বিষয়ে অবগত করে। ইউএনও আসার পর ওনার সঙ্গে আমি কথা বলবো এমন সময় রাব্বি এসে আমার সঙ্গে থাকা সুইম নামের অপর এক ছাত্রকে গালাগাল করতে থাকে। এসময় সুইম রাগান্বিত হয়ে গেলে আমি তাকে সরিয়ে নেওয়ার সময় আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সাইফুল চেয়ারম্যান, শফিকুল, ইউপি সদস্য হাফিজ আমাকে হুমকি দিয়ে বলে ভালো হয়ে যা। ভারি নেতা হয়ে গেছিস। আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও তারা বাধা দেয়। আমি প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।
স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে উদ্দেশ করে আশিক আরও বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করে দেশকে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট মুক্ত করল। আর তারা ক্ষমতায় না এসেই বিল দখল, ফার্ম দখল শুরু করেছে। এই ইউনিয়নে এখন জন্মনিবন্ধন করতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বিষয়টিতে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক-১ তামিম ইসলাম বলেন, আশিক সবসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। জেলা কমিটিতে তার স্থান হয়নি। আমার জানা মতে উপজেলা কমিটিতে তার নাম আসতে পারে। আমি হাসপাতালে গিয়ে আশিককে দেখেছি। তার শরীরে মারধরের দাগ স্পষ্ট। আপনারা সাংবাদিকরা তদন্ত করে সঠিক তথ্য তুলে আনবেন এ অনুরোধ করছি। প্রশাসন দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে- সে প্রত্যাশা করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেহেরপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক-২ নাসিম রানা বাধন কালবেলাকে বলেন, অপর একটি বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসককে দেওয়া ৭ দিনের আলটিমেটামের কারণে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির সব সদস্য সরকারি কার্যক্রমে সহায়তা করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছি। এজন্যই আশিক টিসিবির পণ্য বিতরণের অনিয়ম তদারকি করতে গিয়েছিল। এ সময় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
আমঝুপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমঝুপি ইউনিয়নের টিসিবির কার্ড সম্প্রতি হালনাগাদ করা হয়েছে। তবে যেহেতু বিগত তিন মাস টিসিবির মালামাল সরবরাহ বন্ধ ছিল, তাই মেম্বাররা স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহস্পতিবারের পণ্য পুরাতন কার্ডধারীদের মধ্যে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সময় আমঝুপি উত্তরপাড়ার দুজন ছেলে এসে নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে পরিচয় দেয়। সমগ্র বিষয়টি না বুঝেই, তারা কেন পুরাতন কার্ডধারীদের মধ্যে মালামাল বিক্রয় করা হচ্ছে সেটা নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু করে। এ সময় সেখানে দু-একটা চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে বড় কিছু ঘটার আগেই সদর এসিল্যান্ড বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল করিম কালবেলাকে বলেন, আমঝুপিতে সহকারী ভূমি কমিশনারসহ পুলিশের একটি টিম ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আহতের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন ও তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেহেরপুর সদর এসিল্যান্ড ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী মুয়ীদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমি মূলত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তদারকি করতে। সেখানে যাওয়ার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে গেছে। আমি পৌঁছানো মাত্র ছাত্রটিকে অন্যরা চড়-থাপ্পড় মারছে দেখতে পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করি। ফলে বড় ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিল। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন