রংপুরের পীরগঞ্জে বীজ আলুর সংকটে দিশাহারা কৃষক। এক দিকে খাবার আলুর বাজার মূল্য বেশি। অন্যদিকে বীজ আলু কিনতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা, সে সঙ্গে সংকট। এ দুইয়ে মিলে নাজেহাল অবস্থা কৃষকদের। ফলে জমি তৈরি করেও চাষিরা আলু চাষ করতে পারছেন না। পীরগঞ্জ উপজেলা আলুর জন্য বিখ্যাত হলেও বীজ সংকটের কারণে এবার আবাদ নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছেন কৃষকরা।
বেশি দামে আলুর বীজ কিনে চাষ করার পর মূলধন ঘরে তুলতে পারবেন কি না, সে শঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ। আর সংকটের সুযোগ নিয়েছে বেসরকারি বীজ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো।
জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার অনেক ইউনিয়নে কৃষকরা জমিতে বছরে তিনটি করে ফসল চাষ করছেন। ইরি-বোরো ধান চাষের আগেই অনেক জমিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ চাষ করেন। এছাড়াও ৬০ থেকে ৯০ দিনের রবি ফসল আবাদ করে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারেন বলেই ব্যাপক হারে আলু চাষে ঝুঁকেছেন। আলুর পরই ইরি-বোরো ধান লাগানো সম্ভব হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে পীরগঞ্জের ৩৩১টি গ্রামে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হতে পারে। গতবারের চেয়ে এবারে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে পীরগঞ্জের কৃষি কল বীজ হিমাগার, শান্তনা কোল্ড স্টোরেজ, তছির উদ্দিন কোল্ড স্টোরেজসহ কয়েকটি হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী জানান, ব্র্যাক, সুপ্রিম সীডস্ এবং ওয়ান কেয়ার কোম্পানি তাদের বীজ আলু হিমাগার থেকে ট্রাকে লোড করে ডিলারদের কাছে পাঠাচ্ছে। কৃষকরা সরাসরি বীজ পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিএডিসির বীজ এখনো আসেনি। যেটুকু বরাদ্দ আসে, তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন জানান, ব্র্যাকের প্রতি কেজি স্টিক এবং পাকড়ি আলুর বীজ ১৩০ টাকা এবং জাম (ইন্দুরকানি) ৭০ টাকা দরে কিনে আলু লাগাচ্ছি।
রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘোলা গ্রামের চাষি মমিনুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম জানান, আলুর জায়গায় আলু বীজের সংকট আর চড়া মূল্যে মনে হচ্ছে ‘আড়তেই ঘি মঙ্গা’!
বীজ আলুর ঊর্ধ্বমূল্য এবং সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, ‘১ কেজি আলু উৎপাদনে ১০ থেকে ১২ টাকা খরচ হওয়ায় কৃষকরা আলুতে মনোনিবেশ করেছে। তারা ভিত্তি বীজ, প্রত্যয়িত বীজ এবং মান ঘোষিত বীজ আলুর ওপর বেশি নির্ভরশীল হচ্ছেন। কৃষকরা বীজ আলুতে অতিরিক্ত মূল্যের কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা শিগগিরই ভোক্তা অধিকার এবং ইউএনওকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।
রংপুর অঞ্চলের বিএডিসি সিড মার্কেটিংয়ের উপপরিচালক মাসুদ সুলতান বলেন, ‘শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকে বিএডিসির আলু বিতরণ করা হবে। এবার প্রতি কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হবে।’
মন্তব্য করুন