সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামের মাটিতে তৈরি দৃষ্টিনন্দন টাইলস যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
জানা গেছে, মুরারিকাটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এসব টাইলস তৈরি করেন। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এই পালপাড়ায়। আগের মতোই মাটি সংগ্রহ করে বছরের পর বছর উঁচু স্তূপ করে রাখতে হয়। তারপর সেখান থেকে মাটি কেটে কুমাররা পায়ের মাধ্যমে তৈরি করেন মণ্ড বা খামির। মাটির মণ্ড তৈরির পর শিল্পী তার নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ও খাঁজে ফেলে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের টাইলস। সেগুলো রোদে শুকিয়ে তারপর রং ধরানো হয়। রং লাগানোর কাজ শেষ হলে রোদে শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে আগুনে পোড়ানোর জন্য সাজানো হয় এই টাইলস।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০০২ সালের পর এই টাইলস তৈরি শুরু হয়। সে সময়ে ৪১টি কারখানা থাকলেও এখন টিকে আছে মাত্র ১৩টি। সেখান থেকে উৎপাদিত টাইলস বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি পিসের মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। দেশে আসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মতো বৈদেশিক মুদ্রা।
মুরারিকাটিতে মাটির তৈরি টাইলসের মধ্যে ফেক্স এ্যাংগুলার, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস্ ও ফ্লোর টাইলস রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেকে ইন্টাররন্যাশনাল, নিকিতা ইন্টারন্যাশনাল, মা-কটোস্ ইন্টারন্যাশনালসহ ১০ থেকে ১২টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটিতে উৎপাদিত টাইলস ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে মুরারিকাটির টাইলস।
টাইলস কারখানার শ্রমিক রুস্তম শেখ বলেন, আমাদের এই মাটি মাঠের মিষ্টি মাটি। মহাজন এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মাটি কিনে আনেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই মাটি দিয়ে টাইলস তৈরি করা হয়।
শ্রমিক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, মুরারিকাটির মাটি মিষ্টি মাটি। এই মাটি সোনার চাইতে খাঁটি। এ কারণে এই মাটিটা বিদেশে রপ্তানি হয়।
প্র-এসও অর্গানিক টাইলস কোম্পানির মালিক কামাল হোসেন ভুট্টু বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে। সিন্ডিকেটের কারণেই আমরা যারা দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করছি আমাদের কোনো পরিবর্তন নেই। তিনি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জেকে ইন্টারন্যাশনাল এর সিইও জাকির হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা কলারোয়ার মুরারিকাটির মাটি বেলে হওয়ার কারণে এই মাটি দিয়ে টাইলস সুন্দরভাবে উৎপাদন হয়। যেটা বিশ্বমানের টাইলস হয়ে ওঠে। এই টাইলস দিয়ে আমরা গোটা দুনিয়ার মার্কেট দখল করতে পেরেছি। যারা একবার কলারোয়ার মাটির তৈরি টাইলস ব্যবহার করেছে তারা পৃথিবীর অন্য কোনো মাটির তৈরি টাইলস ব্যবহার করবে না।
তিনি বলেন, আমরা এই টাইলস বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে থাকি। বিশেষ করে এটার বড় বাজার ইতালিতে। যার জন্য এই কলারোয়াকে ইতালির শহর বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, আরব আমিরাত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, তুর্কি ও ব্রিটেনের লন্ডনে আমরা রপ্তানি করে থাকি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, কলারোয়ার মুরারিকাটির টাইলস খুব সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। আমাদের পক্ষ থেকে এই শিল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
মন্তব্য করুন