ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্সের নামে একটি চক্র মেহেরপুরে অভিনব প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতির মেহেরপুর জেলা শাখার সদস্যদের সঙ্গে কিছু দোকানি যৌথ প্রযোজনায় এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর দায় নিতে নারাজ বিসিডিএস, ড্রাগ সুপার ও সিভিল সার্জন।
ফার্মেসি কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ (পিসিবি) এর ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) জেলা শাখার আয়োজনে প্রতিবছর দেশের সকল জেলায় ন্যায় মেহেরপুরেও তিন মাসের সি-গ্রেড ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, এই কোর্সের ৬৩তম ব্যাচের পরীক্ষার দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে। আর ৬৪তম ব্যাচে ভর্তির কোনো সার্কুলারই হয়নি। অথচ ৬৪তম ব্যাচে ভর্তির নাম করে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কাগজপত্র ও টাকা জমা নিয়ে দেওয়া হয়েছে দোকানের রশিদ। অথচ রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কথা অনলাইনে এবং টাকা জমা দেওয়ার কথা ব্যাংকে।
দোকানের ছাপা রশিদে লেখা আছে ‘৬৪তম ব্যাচে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্সে ভর্তির জন্য খরচ বাবদ ৫৬০০ টাকা গ্রহণ করিলাম।’ পাশে টাকা প্রদানকারীর নাম লেখা এবং একটি মাল্টিমিডিয়া দোকানের স্বত্বাধিকারীর স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬৪তম ব্যাচে ভর্তির কোনো সার্কুলার না হলেও গত মার্চ মাস থেকেই কোর্স করতে উৎসাহীদের কাছ থেকেই এভাবেই টাকা নেওয়া হয়েছে। কোর্সের নিবন্ধন ফি ৩ হজার ৮০০ টাকা হলেও রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এভাবেই বিগত কয়েক বছর ধরে চলছে। শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী কোর্স শেষে ফার্মেসি কাউন্সিলে প্রার্থী নিজে উপস্থিত হয়ে সনদ গ্রহণ করার। কিন্তু বিসিডিএস এর সিন্ডিকেট প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০০ টাকা করে সনদ সংগ্রহের জন্য নিয়ে থাকে। এভাবে প্রতি ব্যাচে ২০০ জনের কাছ থেকে মোট ৪ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়। আর বিসিডিএস-এর পক্ষ থেকে কোনো একজন ঢাকায় গিয়ে সনদগুলো এনে বিতরণ করে। বাকি টাকাটা ভাগ বটোয়ারা হয় নিজেদের মধ্যে। মেহেরপুর জেলা বিসিডিএস এর সদ্য বিলুপ্ত কমিটি এভাবেই দুর্নীতি ও লুটপাট চালিয়ে গেছে বছরের পর বছর।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে মেহেরপুরের নবগঠিত বিসিডিএস আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি মো. রিনু কালবেলাকে বলেন, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই এভাবে টাকা নেওয়াটা অবশ্যই অবৈধ। তবে এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে সেটা আমাদের আগের কমিটি করেছে। এতে আমাদের কোনো দায় নেই। এ ছাড়া এসব টাকা বিসিডিএস এর অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। আগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মিয়া ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী আনারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ এবং সচিব হিসেবে ছিলেন মতিউর রহমান ওরফে মতিউল। বিষয়টি নিয়ে উনারা আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে পারবে।
মেহেরপুর জেলা বিসিডিএস-এর সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ কালবেলাকে বলেন, ভর্তির বিষয়টা দেখাশোনা করেন মেহেরপুর জেলা বিসিডিএস কমিটির সচিব মতিউর রহমান। তিনি অত্যন্ত সৎ লোক। তার কাছে টাকা রেখে কেউ কখনো প্রতারিত হয়নি। তবে ভর্তির সার্কুলার হওয়ার ৯ মাস আগে থেকেই এভাবে ভর্তি ফির টাকা রশিদ দিয়ে জমা নেওয়া কতটুকু আইনসঙ্গত এ প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সচিব এবং তনু ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান ওরফে মতিউল কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্সের ভর্তি ও টাকা জমা দেওয়া হয় অনলাইনে। আমি শুধু সার্টিফিকেট এবং কাগজপত্রগুলো নিজের কাছে রেখে চেক করি যেন কোনো ভুল না হয়। এতে জেলার জনগণ উপকৃত হয়। কারণ অনলাইন ভর্তির ক্ষেত্রে অন্য জেলার প্রার্থী মেহেরপুর জেলাতে ভর্তি হয়ে যেতে পারে তখন আমাদের জেলার মানুষের সুযোগ কমে যায়। আমি যেগুলো রেখে দিই সেগুলো কম্পিউটার টাইপের দোকানের মাধ্যমে যথাযথভাবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা হয় এবং সকলেই ভর্তি হতে পারে।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মহী উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ফার্মেসি কাউন্সিলের সার্টিফিকেটের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আপনারা ড্রাগ সুপারের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়টিতে আমার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
ওষুধ প্রশাসনের মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ড্রাগ সুপার শফিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলাটা আমার এখতিয়ার বহির্ভূত। বিষয়টি ফার্মেসি কাউন্সিল বিসিডিএস এর মাধ্যমে তদারকি করে। আপনি এ বিষয়ে ফার্মেসি কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।
ফার্মেসি কাউন্সিল বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে সচিব থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের পাশে দুইটি (০২-৪১০৬১৩১৮ ও ২০) নম্বর দেওয়া আছে। নবরগুলোতে অসংখ্যবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন