সরকার ঘোষিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও রাতযাপন সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
রোববার (১৭ নভেম্বর) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোটের সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, ছাত্রছাত্রী, স্থানীয় জনগণ, দিনমজুর, কুলি, শ্রমিক, মৎস্যজীবী, চাকরিজীবী, তরুণ উদ্যোক্তা, পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী, হোটেল-রিসোর্ট মালিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং রাতযাপন ও পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা জীবন ও জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। পর্যটন উদ্যোক্তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। হোটেল-রিসোর্ট মালিকদের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের এ গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু সরকার তার সিদ্ধান্তের পক্ষে অটল। এ অবস্থায় জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতি ও মানবিক সংকট আসন্ন।
সরকার সব জনগুরুত্ব বিবেচনায় একরোখা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে। জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করেন তারা।
মতবিনিময় সভায় সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে গণবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার ১০ হাজারের বেশি মানুষ নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোট যে কোনো কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
জোটের অন্যতম সদস্য সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা এম এ রহিম জিহাদী বলেন, যেখানে বিভিন্ন পোশাকেশিল্প হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সারা বিশ্ব, সেখানে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সরাসরি পর্যটনকে শিল্প মনে না করা দূরভিসন্ধিমূলক। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে দ্বীপের মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে নিজেরাই ভিন্ন পথ অবলম্বন করবে।
দ্বীপের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরে তারা বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক যেতে না দিলে অভাবের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে; যুবসমাজ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে; চোরাচালান ও মানবপাচারে বাড়বে; মেয়েদের বাল্যবিয়ে পুনরায় শুরু হবে; শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, খড়ি, শেওলাসহ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য উত্তোলনের কারণে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে; মানুষের আয় বন্ধ হলে গাছপালা কেটে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হবে, সে ক্ষেত্রে গাছপালা ধ্বংস হয়ে পড়বে; কচ্ছপের ডিম পাচার শুরু হবে।
এ অবস্থায় আগামী রমজান পর্যন্ত সেন্টমার্টিনকে পর্যটক উন্মুক্ত রেখে পর্যটকদের রাতযাপন সুনিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে দ্বীপের মানুষের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক। তিনি পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। জনমতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানান পর্যটন ব্যবসায়ী আকতার নুর।
এ সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিশিষ্টজন, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক), সেন্টমার্টিনস দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোটের, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির নেতারা, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন, ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ট্যাব), সেন্টমার্টিন দোকান মালিক সমিতি, বোট মালিক সমিতি, মৎস্যজীবী মালিক সমিতি, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতি, জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কুয়াব) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন