টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বুকের পাঁজর ভেদ করে গুলি বের হয় আরিফের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আরিফ হোসেন। ছবি : কালবেলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আরিফ হোসেন। ছবি : কালবেলা

বৈষম্যের শিকল ভাঙতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে হতদরিদ্র আরিফ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছোড়া বুলেটে ঝাঁঝরা আরিফ হোসেনের পুরো শরীর। প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নিয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন।

স্থানীয় ধলাপাড়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আরিফের পেছন দিক থেকে গুলি লেগে বুকের পাঁজর ভেদ করে বের হয়ে যায়। এতে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি তার। প্রতি মাসে তিনবার যেতে হয় চেকআপ করতে। এতে করে চিকিৎসার ব্যয়বার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন আন্দোলনে আহত আরিফ হোসেনের পরিবার।

জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আরিফ হোসেন। গত ১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরা বোনের বাসায় বেড়াতে যান তিনি। ২০ জুলাই বিকেলে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আরিফ হোসেন তার বন্ধুদের সঙ্গে সংযুক্ত হন আন্দোলনে। মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। ছোড়া গুলি পিঠ বিদ্ধ হয়ে বুকের পাঁজর ও ডানা ভেদ করে বেরিয়ে যায় গুলি। এমন সময় সড়কে লুটে পড়েন তিনি। এরপর সহযোদ্ধা বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাঁচা-মরার সঙ্গে যুদ্ধ করে আরিফ কোনোমতে বেঁচে থাকলেও দরিদ্র সংসারটা কেমনে চলবে জানা নাই। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার জীবনে যেন নেমে এসেছে আরও চরম বিপর্যয়। তাই আরিফ পুরোপুরি সুস্থ হলে তাকে একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানাই।

আরিফের মা বলেন, আমি বাড়ি বাড়ি কাজ করে খুব কষ্ট করে দুইটা ছেলেকে পড়াশোনা করাইছি। আরিফের জন্মের ৭ মাস পর ওর বাবা মারা যায়। এই সংসারটা স্বামীকে হারিয়ে দুটি সন্তানকে নিয়েই যেন আমার স্বপ্ন। এই স্বপ্নের মধ্যে পুলিশ গুলি করেছে।

তিনি আরও বলেন, এই কষ্টের সংসারে ওষুধ কি না দিতে পারি না। আমরা খুবই অসহায় অবস্থা আছি। যদি কেউ আমার ছেলেকে সহায়তা করত। তাহলে আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে যাতায়াতের যে খরচটা সেটি হয়তো মিটে যেত। তা না হলে বাকি চিকিৎসা থমকে যাবে। আমার ছেলের জীবনটাও থমকে যেতে পারে।

আহত আরিফ হোসেন বলেন, আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনের যোগ দেই। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে তিনজন পুলিশ এসে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে উত্তরা ১৭ তে রওনা হই। এমন সময় একজন পুলিশ ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বহর চলে আসে। আসার সঙ্গে সঙ্গে এলোপাতাড়ি আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে আমার পেছন দিক থেকে বুকের বাম পাঁজর দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। এরপর বন্ধুরা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আমার তিনটি সার্জারি হয়। বুকের রক্ত বের করার জন্য তারপর খাদ্যনালিতে অপরটি ফুসফুসে আঘাত আসার কারণে ফুসফুসে একটি সাইট কেটে ফেলা হয়।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় প্রায় ২ লাখ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া আমি কোনো ধরনের সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসার খরচ ফ্রি করে দিলে আমার হাসপাতালে আর কোন খরচ হয়নি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে যাদের ছুটি দিয়েছে তাদের খরচ করতে হয়। চিকিৎসার জন্য আমার মাসে প্রায় দুই থেকে তিনবার ঢাকা হাসপাতালে যেতে হয়।

আরিফ হোসেন আরও বলেন. সেখানে যাতায়াত বাবদ এবং ওষুধ কেনা বাবদ যে খরচ হয় সেটি জোগাড় করতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার আবেদন আমাকে যাতায়াত বাবদ ও চিকিৎসার জন্য যাবতীয় খরচ বহন করে আমাকে স্থায়ী একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই।

ঘাটাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন সরকারিভাবে তালিকা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যারা আহত হয়েছে এবং যারা শহীদ হয়েছে সেসব পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৭ : বিআরটিএ

‘পারফরম্যান্স করতে না পারলে দাবি তুলব, নির্বাচন দিয়ে সরে যান’

চাপে ফেলতে চাইছেন ট্রাম্প, মাথা নোয়াবে না ইরান

কম্বল পাচারের সময় ধরা খেলেন পুলিশ সদস্য

ফের ঢাকা মেডিকেলে ভুয়া নারী চিকিৎসক আটক

মেট্রোরেলের এমআরটি-৫ প্রকল্পে ব্যয় কমলো ৭ হাজার কোটি টাকা

৭২তম মিস ইউনিভার্সের মুকুট জিতলেন ভিক্টোরিয়া

কমছে তাপমাত্রা, কবে আসছে শৈত্যপ্রবাহ?

কৃষক হত্যা মামলার রায়ে ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পার্লামেন্টে বিল ছিঁড়ে নাচতে লাগলেন এমপি

১০

মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি!

১১

স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন মওলানা ভাসানী : রাশেদ প্রধান

১২

ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তার

১৩

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কত, জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

১৪

সরকারের চোখে ১০০ দিনের সাফল্য

১৫

কেন উদ্ধার হচ্ছে না টাইটানিক, কী অদৃশ্য শক্তি রয়েছে গভীরে?

১৬

বিচারে কেন অবহেলা, প্রশ্ন ইসলামী আইনজীবী পরিষদের

১৭

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে জরিমানা ৫৩ লাখ টাকা

১৮

ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠকের খবর ইরানের অস্বীকার

১৯

দেশ টিভির এমডি আরিফ ২ দিনের রিমান্ডে

২০
X