ঢাকার দোহার উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা হিসেবে ইলোরা ইয়াসমিনের যোগদানের পর থেকেই নিজস্ব আইন বাস্তবায়ন করেছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও অন্য কোনো ডিভাইস নিয়ে তার কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না।
সম্প্রতি উপজেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিকস ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা একাধিকবার ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশকালে তার বাধার মুখে পড়েন। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক নয়াদিগন্তের দোহার প্রতিনিধি শওকত আলী রতন, দৈনিক জণকণ্ঠের প্রতিনিধি সুজন খান, স্যাটেলাইন টেলিভিশন চ্যানেল এস-এর প্রতিনিধি কাজী জোবায়ের আহমেদ, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি তানজিম ইসলাম, দৈনিক সংবাদ সারাবেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম, সাপ্তাহিক এশিয়া বার্তার স্টাফ রিপোর্টার সুমন হোসেন কালবেলাকে বলেন, গত ১২ নভেম্বর সকালে উপজেলা সমাজকল্যাণ অফিসে এক সহকারী কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের ক্যামেরা বাইরে রেখে যাওয়ার শর্তে কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেন। ওই ঘটনায় ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ফিরে আসেন সাংবাদিকরা।
বিষয়টি জানার জন্য বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করলে তিনি দেখামাত্রই ক্যামেরা বাইরে রেখে আসার জন্য বলেন। এ নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রজ্ঞাপনের কথা বলেন।
এ সময় তিনি তার অফিস সহকারীকে দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপনের কপি আনিয়ে সাংবাদিকদের হাতে দেন। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপনে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের বিষয়ে কোনো কিছু লেখা নেই। প্রজ্ঞাপনে লেখা : ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্মারক নং-০৫ ০০ ০০০০ ০২১২৫ ০০২ ২০২৪ ৩৮/ তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২৪’।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়লের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এই স্মারক নম্বর দিয়ে সার্চ করলে সংশ্লিষ্ট বিয়য়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমন ঘটনায় দোহার উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে দোহার উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন কালবেলাকে বলেন, অনেক সাংবাদিক একসঙ্গে এসে অনুমতি না নিয়েই আমার অফিস কক্ষে প্রবেশ করলে আমি শর্ত সাপেক্ষে ক্যামেরার সামনে আসব এবং কথা বলব এ কথা বলেছি।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, সাংবাদিকদের ইউএনওর কক্ষে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশে কোনো বাধা কিংবা নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমার জানা নেই।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়া সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কোনো রিপোর্টের প্রয়োজনে কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে আবেদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তথ্য দিতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের স্পোকস পারসন হিসেবে ওই কর্মকর্তা যদি তথ্য না দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার বিধান রয়েছে। অভিযোগের ফলে বহু সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য কমিশনে তলব ও শাস্তি প্রদানের নজির রয়েছে।
প্রশ্ন রেখে ঢাকা জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, সাংবাদিকরা সরকারি অফিসে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করবেন তো কী নিয়ে প্রবেশ করবেন? এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রেস ক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ইউএনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না।
মন্তব্য করুন