দিলীপ মজুমদার, কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গুলির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন জানে আলম, অসহায় বাবা

অসহনীয় ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতেই কাটছে জানে আলমের দিন। ছবি : কালবেলা
অসহনীয় ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতেই কাটছে জানে আলমের দিন। ছবি : কালবেলা

জানে আলম জনির (২০) বাবা বেলাল হোসেন ছোট মুদি দোকান চালান। সামান্য আয়ে টানাটানিতে চলে সংসার। বছর তিনেক আগে চট্টগ্রামের শাহ আমানত মাজার এলাকার একটি টুপি-আতরের দোকানে কাজ নেন জনি। থাকা-খাওয়া বাদে মাসে পেতেন সাত হাজার টাকা। কিছুটা সহযোগিতা করতেন বাবাকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে ছররা গুলিবিদ্ধ হন জানে আলম। সারা শরীরে ছড়িয়ে রয়েছে গুলি। অসহনীয় ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে তিন মাস ধরে বাড়িতেই কাটছে তার দিন। একে তো আয়ের পথ বন্ধ। তার অভাবের কারণে নিতে পারছেন না উন্নত চিকিৎসা।

জানে আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। নিয়মিত অংশ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মসূচিতে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট সকালে ছিলেন চট্টগ্রামের লালদিঘির পাড় এলাকায়। হঠাৎ সেখানে পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। গুলি থেকে বাঁচতে পেছনে ফিরলেই ছররা গুলি বিঁধে যায় সারা শরীরে।

সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কিছু ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে উন্নত চিকিৎসা নিতে বললেও তার পারেননি। শরীরে অসংখ্য ছররা গুলি নিয়ে এখন বাড়িতেই অসনীয় যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি।

গুলিবিদ্ধ জানে আলমের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের হাওরা গ্রামে। চার ভাইয়ের মধ্যে জানে আলম তৃতীয়।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে যাদের রক্ত ঝরেছে, যথাযথ উন্নত চিকিৎসার অভাবে তাদের জীবন এখন সংকটে। জনির এই অবস্থার পর আজও কেউ খবর নেয়নি।

আন্দোলনের স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জানে আলম কালবেলাকে বলেন, শুরু থেকেই চাকরির কথা চিন্তা না করে আন্দোলনে ছিলাম। ৫ আগস্ট সকালের দিকে চট্টগ্রামের লালদিঘির পাড় এলাকায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে থাকে পুলিশ। আমি সামনে ছিলেন। গুলি থেকে বাঁচতে পেছনে ফিরতেই একের পর এক ছররা গুলি এসে শরীরে লাগে। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই গুলি লাগেনি। তখন আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। পরে অন্য আন্দোলনকারীরা অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ দিয়ে পরদিন আমাকে ছেড়ে দেয়। ডাক্তার পরামর্শ দেন সার্জারি চিকিৎসক দেখানোর। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে পরিবার আমাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসক দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানেও ওষুধপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে চিকিৎসা। কয়েক দিন পর আবার বাড়ি চলে আসি। এখন অনুদান নয়, উন্নত চিকিৎসা চান তিনি।

জানে আলমের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, সংসার চালাতেই অনেক কষ্ট হয়। অসচ্ছলতার কারণে ছেলেটাকে প্রাইভেট কোনো হাসপাতালেও চিকিৎসা করাতে পারি না। বর্তমানে ছেলেটার জন্য ওষুধও কিনতে পারছি না। প্রশাসন ও সরকারের কাছে ছেলের উন্নত চিকিৎসার দাবি করেন তিনি।

জানে আলমের মা জাকিয়া বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। যন্ত্রণায় ছেলেটা এভাবে কাতরাচ্ছে। এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।’

জানে আলম গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাসখানেক পর মনোহরগঞ্জের সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানি চাকমা একটি মতবিনিময় সভায় তার সম্পর্কে অবহিত হন। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে জনিকে কুমিল্লা সিএমএইচ হসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। সেখানে শরীর থেকে আটটি গুলি বের করা হয়। এরপরও শরীরে থেকে যায় শতাধিক গুলি।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, আগের ইউএনও স্যার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে তার একবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তবে বর্তমানে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার, যেটা অনেক ব্যয়বহুল। এ জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আমি যোগাযোগ করেছি। জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার জন্য তার একটি আবেদন আমার মাধ্যমে ফাউন্ডেশন বরাবর পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার তাই করব : সিইসি

চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বিডার

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে নির্দেশনা আদালত দেবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভিক্ষা না করার শর্তে হজে যেতে পারবেন পাকিস্তানিরা

আবারও ঘনিষ্ঠ শাকিব-পূজা! (ভিডিও)

জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা

পাঁচ বিসিএসে নিয়োগ পাবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন

‘পোলারে কুনদিন কষ্ট দেই নাই, হেই পোলায় কত কষ্ট পাইয়া মরল’

বিমানবন্দরে নিউ এজ সম্পাদকের হয়রানির ঘটনায় এসবির দুঃখ প্রকাশ

কারখানা বন্ধের নোটিশ পেয়েই মহাসড়ক অবরোধ

১০

‘বিদেশ ভ্রমণ ঠেকাতে কয়েক হাজার মানুষকে ব্লকড লিস্ট করেছিল হাসিনা সরকার’

১১

শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ কমিশনার

১২

পর্তুগাল সফরে গে‌লেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটালেন প্রধান শিক্ষক

১৪

শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ঘেরাও

১৫

গণহত্যা চলছেই : ইসরায়েলের হামলায় ১২০ ফিলিস্তিনি নিহত

১৬

দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বদলীয় ঐক্যের ডাক

১৭

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের সুপারিশ

১৮

এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়ল অনূর্ধ্ব-১৯ দল

১৯

বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত

২০
X