বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত নাজমুল ইসলাম রাজু (৩৯) ও আব্দুল্লাহ আল মাহিনের (১৬) মরদেহ প্রায় তিনমাস পর কবর থেকে তোলা হয়েছে। এর আগে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুজনকে দাফন করা হয়েছিল।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে নগরের কালীবাড়ি কবরস্থান থেকে নাজমুল ইসলাম রাজুর মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম নাজমুস ছালেহীনের উপস্থিতিতে এ মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় সিআইডি, থানা পুলিশের সদস্যরা ও নিহতের ছোট ভাই উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম। গত ২৫ আগস্ট থানায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
সে মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডির পরিদর্শক শহীদুর রহমান। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফন করায় তদন্তের স্বার্থে আদালতে লাশ ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা করা হয়। লাশ উত্তোলনের জন্য গত ২৩ অক্টোবর আদালতের আদেশ পাই। নাজমুল ইসলাম রাজু ময়মনসিংহ নগরের সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকা মৃত নিলু মিয়ার ছেলে। তার মায়ের নাম মোছা. সাজেদা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন নাজমুল।
স্বজনেরা জানান, নাজমুল ইসলাম দরজির কাজ করতেন উত্তরার আজমপুর এলাকায়। গত ১০ জুলাই উত্তরার আজমপুর এলাকায় একটি কারখানায় দরজির কাজে যোগ দেন তিনি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দ মিছিলে যান নাজমুল। ওই দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উত্তরা পূর্ব থানার সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে স্বজনেরা রাতে লাশ নিয়ে যান। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৬ আগস্ট ময়মনসিংহ নগরের কালীবাড়ি গোরস্তানে দাফন করা হয়।
অপরদিকে ময়মনসিংহ নগরের পুরোহিতপাড়া এলাকার জামিল হোসেন ও সামিরা জাহান দম্পতির একমাত্র ছেলে আবদুল্লাহ আল মাহিন (১৬)। ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয় আব্দুল্লাহ আল মাহিন। পরে তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সাড়ে নয়টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় মাহিন। গত ৫ আগস্ট সকালে কিশোর মাহিনকে সমাহিত করা হয় ময়মনসিংহ নগরের ভাটিকাশর কবরস্থানে। আদালতের আদেশে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আল ইমরানের উপস্থিতিতে মরদেহ তোলা হয়।
তার পরিবার জানিয়েছে, একজন হেলমেটধারীর অস্ত্রের গুলিতে মাহিন নিহত হন। জামিল হোসেন ও সামিরা জাহান দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। উত্তরা দিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে মাহিন ভর্তি হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এনআইইটি)।
মাহিন নিহতের ঘটনায় গত ২১ আগস্ট বাবা জামিল হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের নাম ও অজ্ঞাত পরিচয় ৬০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের আদেশে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আল ইমরানের উপস্থিতিতে দাফনের ৩ মাস ৭ দিন পর মাহিনের মরদেহ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এসএম নাজমুস ছালেহীনের উপস্থিতিতে দাফনের ৩ মাস ৬ দিন পর নাজমুলের এ মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় সিআইডি, থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
মন্তব্য করুন