কেক কাটা, মোমবাতি প্রজ্বলন, কবর জিয়ারতসহ বিভিন্ন আয়োজনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নুহাশপল্লীতে তার পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা লেখককে স্মরণ করলেন।
হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বললেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আগামী এক দুই বছরের মধ্যে জাদুঘর নির্মাণকাজ শুরু ও শেষ করবার প্রত্যাশা জানান তিনি।
নূহাশ পল্লীর কর্মীরা জানান, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীতে এক হাজার ৭৬টি মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। রাত ১২টা ১ মিনিটে জ্বালানো মোমবাতির আলোয় পুরো নুহাশপল্লী আলোকিত হয়ে উঠে। পরে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী নুহাশপল্লীতে আসেন।
দুপুর ১২টার দিকে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদ হুমায়ূনের উপস্থিতিতে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করা হয়। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর কাটা হয় কেক। প্রতিবারের মতো এবারও হুমায়ূন পরিবার, তার ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচু তলায়। নন্দিত লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকরা। তারা লেখকের প্রতি অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা জানান।
কবর জিয়ারত শেষ মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকে হুমায়ূনের স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সবকিছু সযত্নে রাখা আছে কিন্তু জাদুঘরটি এখনো করতে পারেনি এর আসলে অনেকগুলো কারণ। প্রধান কারণ আর্থিক। নুহাশপল্লীর আয় দিয়ে এখানকার এবং ওনার স্কুলের ব্যয় পরিচালনা করা হয়। আমরা এখনো আশা করছি যে আগামী এক দুই বছরের মধ্যে জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু এবং শেষ করবো।
তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিশেষ দিনে আলাদা কোনো ভাবনা হয় না। বরং আমি বলব বিশেষ দিনগুলোর চেয়ে আমি সাধাররণ দিনগুলোতে তাকে বেশি করে অনুভব করি। পরিবার ও কর্মসঙ্গিনী হিসেবে আমি প্রতিদিন তাকে একইভাবে অনুভব করি। ওর ছেলের মধ্যে অনেকখানি তার ছায়া যখন দেখি আমি বিষয়টা খুব উপভোগ করি।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে তার মা পজেলার কুতুবপুর গ্রাম। তার বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। জনপ্রিয় দুই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।
বাবা পুলিশ অফিসার হওয়ায় বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। সেজন্য তিনি সর্বশেষ বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৬৭ সালের এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ডিস্টিংশন নিয়ে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পরই তিনি চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার ইত্যদি। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনও আবার রং-তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রংহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোটপর্দা, বড়পর্দায় তার নানা সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটেছে।
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণে করেন। পরে ২৪ জুলাই তাকে নুহাশপল্লীর লিচু তলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
মন্তব্য করুন