হুমায়ুন কবির, সাভার
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানে নিহত দেখিয়ে মামলা, থানায় হাজির ‘মৃত’ ব্যক্তি

আল আমিন মিয়া। ছবি : কালবেলা
আল আমিন মিয়া। ছবি : কালবেলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আল আমিন মিয়া (২২) মারা গেছেন এমন দাবি করে ঢাকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেছিলেন কুলসুম বেগম নামে এক নারী। তবে যাকে মৃত দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে এবার তিনি এসে হাজির থানায়। জানালেন, তাকে না জানিয়ে স্ত্রী অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করেন।

থানা সূত্র জানায়, গত ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করে ঢাকা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন কুলসুম বেগম নামে এক নারী। ওই মামলা গত ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভূক্ত হয়। মামলায় কুলসুম বেগম তার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরি বাংগালা গ্রামে। আর বর্তমান ঠিকানা আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায়।

মামলার এজাহারে লেখা হয়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাদীর স্বামী আল আমিন মিয়া (৩৪) ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়। ওই দিন শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইলে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় তার স্বামী। তবে পরাজয় মানতে না পেরে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচার গুলি চালালে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাদী তার স্বামীকে খুঁজে পাননি। এরপর আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালের ৬ আগস্টের এক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারেন, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত বিপুলসংখ্যক লাশ দাফন করেছে। এর কাগজপত্র তার কাছে আছে। এরপর তিনি হাসপাতালের কাগজপত্র, ছবি ও ভিডিও থেকে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।

এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুছ ছালাম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি মামলার বিষয়টি জানতে পারে আল আমিন মিয়ার পরিবার। তার পরিবার জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারসহ তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার পিরিজপুর এলাকায় বাস করছেন। আল আমিন পেশায় মেকানিক। কাজের সূত্রে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্ত্রীসহ জুড়িতে ছিলেন তিনি। তবে এর কয়েক দিন পরই স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহ বাধে আল আমিনের। এরপর স্ত্রী তাকে না জানিয়েই মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরিতে তার বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে আর যোগাযোগ ছিল না তাদের।

আল আমিন মিয়ার পরিবার জানায়, মামলা হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি জানতে পারেন, তাকে মৃত দেখিয়ে তার স্ত্রী একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামির নাম বাদ দিতে লোকজনের কাছ থেকে তার স্ত্রী টাকাপয়সা নিচ্ছেন। সেসময় আল আমিন ছিলেন মৌলভীবাজারের জুড়ি এলাকায়। এরপর বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে আল আমিন প্রথমে জুড়ি থানায় ও পরে দক্ষিণ সুরমা থানায় যান। সেখান থেকে তাকে আশুলিয়া থানায় পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার রাতে আশুলিয়া থানায় বসে কথা হয় আল আমিন মিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে। ভুক্তভোগী আল আমিন মিয়া বলেন, আমার স্ত্রী কুলসুম বেগম গত আড়াই থেকে তিন মাস আগে আমার বাসা থেকে ঝগড়া করে তার বাবার বাড়ি চলে আসে। তারপর থেকে আর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত তিন চার দিন আগে আমি জানতে পারি, সে একটা মামলা করেছে আমি গত ৫ আগস্ট মারা গেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। ওই মামলার এক আসামি আমাকে ফোন করে জানায় বিষয়টি। আমি ওখানে আমার নিকটস্থ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় যাই, সেখানে একটা জিডি করি। সেখানকার ওসি আমাদের এই আশুলিয়া থানায় পাঠায়।

আমি বলতে চাই, আমি জীবিত আছি। আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে। আমি মারা যাইনি। আমি এই মামলা প্রত্যাহার করতে চাই।

তার বাবা মো. নুরুন নবী বলেন, আমার ছেলে মারা যায়নি। সে জীবিত আছে। মিথ্যা মামলা করেছে তার স্ত্রী। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।

আল আমিনের ভাই জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাই আল আমিনের স্ত্রী ভুল করে একটা মিথ্যা মামলা করেছে। মামলাটা মিথ্যা বানোয়াট। আমার ভাই বা আমাদের পরিবারের কেউই বিষয়টি নিয়ে অবগত নয়। বিষয়টি জানার পর আমরা দক্ষিণ সুরমা থানায় গেছি। তারা আমাদের আশুলিয়া থানায় পাঠান। এই মামলার কারণে যারা ভোগান্তিতে পড়েছেন, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমা চাই। আমরা জানতাম না এমন মামলা হয়েছে। আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নাই এই মামলার বিষয়ে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাভার আশুলিয়া অঞ্চলের কর্মী তুহিন ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে লোকজনকে জিম্মি করা হয়েছে। বোকা বানানো হয়েছে। আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব স্বার্থ হাসিলে যারা এমন মামলা করছেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট, উদ্যেশ্যের বিরোধী। এই ধরনের মামলা যারা করেছে, তাদের বিচার চাই। যে নারী এ মামলা করেছে তাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাকেসহ সবাই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, যেহেতু তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন, তাই বাদীর বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আল আমিনকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে মিথ্যা মামলার বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় যাব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফাঁপোড় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ যেসব আমল

ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

দু’দিনের ব্যবধানেই বাড়ল সোনার দাম

শাবিতে ‘গণহত্যায় অর্জিত স্বাধীনতা’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী শুরু

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে চিন্তাধারায় বৈচিত্র্য আনতে হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা

থানা হবে নগরবাসীর সার্ভিস সেন্টার : নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার

‘খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছিল’

কুয়াকাটায় ৩২৩ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ শিক্ষার্থীদের

১০

বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক ডিসেম্বরে, হতে পারে হাসিনার প্রত্যর্পণের আলোচনা

১১

এবার পাবিপ্রবিতে চোর সন্দেহে আটক যুবক

১২

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলাচল শুরু ২ ডিসেম্বর

১৩

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা প্রয়োজন, তা করা হবে : সিইসি

১৪

পুতিনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া বার্তা

১৫

ব্রেক ফেল হওয়ায় প্ল্যাটফর্মের ২ কিমি দূরে থামলো ট্রেন

১৬

যথাযোগ্য মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

১৭

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রদূত আনসারীর ফেসবুক পোস্ট

১৮

গতির পার্থে লড়াইয়ের জোশ

১৯

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক মারধর

২০
X