দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার চাহিদা কমে গেছে। ফলে উত্তোলিত কয়লা মজুতের জায়গা না থাকায় খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের মধ্যে দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আগে থেকে একটি বন্ধ থাকলেও নতুন করে আরেকটি বন্ধ করা হয়। এতে বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
বিয়ষটি নিশ্চিত করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গতকাল সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের মধ্যে চালু থাকা ১২৫ মেগাওয়াটের ১ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ইউনিট থেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক প্রয়োজন হয় প্রায় ৭০০ টন কয়লা।
কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াটের ২ নম্বর ইউনিটে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কারকাজ চলায় চার বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ আছে।
ফলে এখন ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদিত ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই ইউনিট সচল রাখতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে মজুত কয়লার ফেইজটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশঙ্কা করছে খনি কর্তৃপক্ষ।
তারা জানায়, কয়লা খনি থেকে প্রতিদিন কয়লা উত্তোলন হওয়ার কথা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু গত ৩ আগস্ট খনির ১৪১৪ ফেইজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু থেকে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন হারে কয়লা নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
গত অক্টোবর পযর্ন্ত এ ফেইজ থেকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরও ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ।
দেশে একমাত্র উৎপাদিত কয়লার গ্রাহক পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে। ৩টি ইউনিট চালাতে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শুরু থেকে ৩টি ইউনিট একসঙ্গে চালাতে সক্ষম হয়নি। ৩টি ইউনিট চালাতে না পারায় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো ইউনিট বন্ধ থাকে। ইউনিটগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় কয়লার খরচও কমে গেছে। ফলে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কম কয়লা গ্রহণ করছে।
খনি সূত্র জানায়, তাপবিদ্যৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিট যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়ায় গত আগস্ট থেকে দৈনিক গড়ে ৫ হাজার টনের স্থলে ২ হাজার ৩০০ টন করে কয়লা গ্রহণ করছে। অর্থাৎ বিসিএমসিএলের কোল ইয়ার্ডে উৎপাদিত কয়লার মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৭০০ টন করে কয়লা জমা হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে মজুত। কয়লাখনি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত কয়লা সংরক্ষণের জন্য বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ৩টি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সেডিমেন্ট কোল সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপর দুটি কোল ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা রয়েছে দুই লাখ টন।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ওই কোল ইয়ার্ডে ২ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। বিসিএমসিএলের কোল ইয়ার্ড কয়লা দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ায় কয়লা সংরক্ষণের আর কোনো যায়গা নেই। চলমান ১৪১৪ ফেইজ থেকে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন হারে কয়লা উত্তোলিত হচ্ছে। বিষয়টি কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ গত ১ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবরে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। বিভিন্ন সময়ে মৌখিকভাবেও জানানো হয়। কিন্তু তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, উত্তোলিত কয়লা খনির কোল ইয়ার্ডে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হবে। চলমান ১৪১৪ ফেইজের স্বাভাবিক কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হলে বিসিএমসিএল এবং চীনা কনসোর্টিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে। ফেইজটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রর প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বড়পুকুরিয়া খনিতে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃতীয় ইউনিট চালাতে কয়লার প্রয়োজন দৈনিক ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বাকি কয়লা খনির ইয়ার্ডে পড়ে থাকছে। ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রয়োজন না থাকায় উৎপাদিত কয়লা নেওয়া হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন