কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাবেক আইজিপি শহীদুলের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া দ্বিতীয় মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদারকে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে ওই দুজনকে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

কুমিল্লা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) কাইমুল হক রিংকু বলেন, এ কে এম শহীদুল হক ও যুগ্মসচিব এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদারকে আদালতে হাজির করা হলে প্রথমে তাদের ৮ বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আদালত আবেদন গ্রহণ করে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ মামলায় জহিরুল ইসলাম নামের আরও একজনের দুদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সরেজমিন দেখা যায়, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শহীদুল হক ও কিবরিয়া মজুমদারকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বেলা ১১টা ৭ মিনিট থেকে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তারা আদালতের ভেতর ছিলেন। পরে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আবার তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের আদালতে প্রবেশ ও বের করার সময় আইনজীবীসহ বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’, ‘শহীদুল হকের ফাঁসি চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। বের করার সময় কয়েকজন তাদের কিলঘুষি মারার চেষ্টা করেন। পরে দ্রুত পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

শহীদুল হকের পক্ষের আইনজীবী এ এইচ এম আবাদ হোসেন এবং এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদারের আইনজীবী জাকির হোসেন খান বলেন, হয়রানির উদ্দেশে ও রাজনৈতিক কারণে তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ মামলাটির সঙ্গে এই দুজনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আদালতে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুরের দাবি জানিয়েছি। পরে আদালত তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ঘটনায় আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক বলেন, এ ঘটনায় প্রথম মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী, সালাউদ্দিন আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরীসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাদের ফাঁসানো হয়েছিল।

এ ছাড়া তিনি বলেন, শহীদুল হককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বের হবে কারা নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, অর্থদাতা, কোথা থেকে গানপাউডার আনা হয়েছিল। আমাদের মামলার আসামি কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন এসআই এখনো চাকরি করছেন। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাসে পেট্রলবোমা মেরে ৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্ত বাদী হয়ে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও র‍্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী, থানার তৎকালীন ওসিসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে পেট্রলবোমা হামলার শিকার বাসটি বাদীর তত্ত্বাবধানে চলত বলে দাবি করেছেন আবুল খায়ের। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জামমুড়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে সরাসরি এফআইআরের (নথিভুক্ত) নির্দেশ দেন।

চৌদ্দগ্রাম থানার পুলিশ জানায়, গত ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমরকড়া গ্রামের প্রয়াত মফিজ উদ্দিন আহম্মদ মজুমদারের ছেলে। তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পিএস ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল-অবরোধ চলাকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজীপুরে তুলার গোডাউনে আগুন

৮ বছর পর ‘লাল গোলাপ’ নিয়ে ফিরছেন শফিক রেহমান

কমিশন্ড অফিসার নেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

সমন্বয়ক পরিচয়ে কমিউনিস্ট পার্টির পথসভায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ

করাচি থেকে চট্টগ্রামে এলো পণ্যবাহী জাহাজ

আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’

লেবাননের আরও অভ্যন্তরে ঢোকার চেষ্টা, নিহত ৬ ইসরায়েলি সেনা

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস 

আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত সরকারের

ভবদহে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে ভাসমান টয়লেট

১০

মেয়েকে শাসন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে হত্যা

১১

১৪ নভেম্বর, ইতিহাসের এই দিনে কী ঘটেছিল

১২

বৃহস্পতিবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৩

খুবিতে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফির প্রতিবাদে আন্দোলন

১৪

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল যুবকের

১৫

উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরেছেন আহতরা 

১৬

১৪ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

জেডআরএফের পরিচালনা পর্ষদ 'বোর্ড অব ডাইরেক্টরস কমিটি’ গঠন

১৮

হাসপাতালে ফিরছেন না, রাতেও রাস্তায় থাকছেন আহতরা

১৯

প্রধান উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না: আন্দোলনকারী

২০
X