ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় দলের অন্তত ২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এ সময় দুটি বাড়ির ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ১২ জনকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত ১২ জনের বিষয়টি ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সরইবাড়ি গ্রামে বহুদিন ধরে ‘খান গ্রুপ’ ও ‘তালুকদার গ্রুপে’র মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে জড়ায় তারা। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন খান গ্রুপের জিন্নাত আলী খা, অন্যদিকে তালুকদার গ্রুপের নেতৃত্ব দেন বাবু তালুকদার।
১৫ দিন আগে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটি হয় তালুকদার গ্রুপের হাসমত হাওলাদারের (ক্বারি সাহেব) সঙ্গে খান গ্রুপের মহি হাওলাদারের। তারা দুজন আপন চাচাতো ভাই, কিন্তু দুজন গ্রাম্যভাবে দুই দলে চলেন। সেই জের ধরে মহি হাওলাদারকে হাসমত হাওলাদার ওরফে ক্বারি সাহেব মারধর করেন। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে দুই দলের মধ্যে।
সোমবার সকালে দুই গ্রুপে ঘোষণা দিয়ে সঙ্গবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ঢাল, সড়কি, টেঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক চলে সংঘর্ষ।
খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত রাজু চৌধুরী, আবুল হোসেন হাওলাদার, আব্দুল লতিফ হাওলাদার ও হাসমত হাওলাদার ওরফে ক্বারি সাহেবকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তালুকদার পক্ষের আবু জাফর হাওলাদার বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে খান গ্রুপের লোকজন তাদের পক্ষের লোকজনের পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যান। এরপর আমরা আদালতে মামলা করি। রোববার মামলার কপি ওঠায় খান গ্রুপ। এরপর বিকেলে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা। এর জেরে আজ সকালে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছেন খান পক্ষের লোকজন।’
খান গ্রুপের শরীফ খান বলেন, ‘১ থেকে ১২ দিন আগে তালুকদাররা আমাদের পক্ষের মহিউদ্দিনকে গ্রামের পথে পেয়ে মারধর করেন। গত শনিবার তালুকদাররা আমাদের পক্ষের লোকজনের সরইবাড়ি গ্রামের দু-তিনটি দোকান ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি কয়েকটি নৌকা ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আজ সকালে তালুকদার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন এবং বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন।’
এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানার ওসি মোকসেদুর রহমান জানান, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের উভয় দলের একাধিক ব্যক্তিরা আহত হয়েছেন। এলাকায় ফের যেন সংঘর্ষ না ঘটে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মামলা পেলে আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন