হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রিজভী আহমেদ খালেদকে ৫০ বার ধরে ওঠবস করানো হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকারকে (৫৫) আটক করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। পরে দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন তারা।
রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ও সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আটকের ঘটনা ঘটে।
আটক শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ উপজেলা কুর্শি ইউনিয়নের মুছন আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আটক গৌরমনি সরকার নবীগঞ্জ পৌরসভার জয়নগর এলাকার ধরনি সরকারের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির ডাকে সারা দেশে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ডাক দিয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড়ে রোববার সকাল থেকে আলাদাভাবে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
এ ছাড়া নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল ও শোডাউন করেন তারা। দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা গৌরমনি সরকার নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায় এলে নবীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোশাহিদ আলম মুরাদের নেতৃত্বে কতিপয় যুবদল-ছাত্রদলের নেতা গৌরমনিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং কানধরে ওঠবস করান। পরে গৌরমনি সরকারকে হেনস্তা করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা মার্কেটের আয়েশা ভ্যারাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী শাহ রিজভী আহমেদ খালেদকেও আটক করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
পরে হবিগঞ্জের রিপন শীল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালেদ ও গৌরমনির সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ গত ১১ অক্টোবর হবিগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রিপন শীল হত্যা মামলায় খালেদ ও গৌরমনিকে আটক দেখিয়ে আদালতে তুললে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দুই নেতা পরিবারের দাবি, খালেদ নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা আয়েশা ভ্যারাইটিজ স্টোর নামক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয় এবং গৌরমনি সরকারকে নবীগঞ্জ বাজারে সবজি কিনতে এলে তাকে আটক করা হয়।
অভিযোগ বিষয়ে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দাবি করে বলেন, পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার চেষ্টাকালে সাধারণ জনগণ ও ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগপন্থি নবীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ ছাড়া অনেক আওয়ামী লীগপন্থি ব্যবসায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী রেখে পালিয়ে গিয়েছেন।
এলাকার সুশীল সমাজের দাবি, বিগত সময়ে নবীগঞ্জ উপজেলায় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনার ঘটেনি। এখন তা কাম্য নয়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে বিএনপি-যুবদলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করে। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের আটক করেছি।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক খান কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাই তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন