দেলোয়ার হোসেন, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুখী দম্পতির অনন্য উদাহরণ মোমতাজ-সোফিয়া

কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সুখী দম্পতির অনন্য উদারহরণ মোমতাজ-সোফিয়ার হাতে সম্মাননা তুলে দেন অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সুখী দম্পতির অনন্য উদারহরণ মোমতাজ-সোফিয়ার হাতে সম্মাননা তুলে দেন অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

সামাজিক, পারিবারিক ও ভার্চুয়াল জগতের কারণে চারপাশে যখন ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো, নানা অধিকারের প্রশ্নে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙে যাচ্ছে তুচ্ছ কারণে, একপর্যায়ে মামলা-মোকদ্দমাও গড়ায় আদালতে, সে যুগের নারী-পুরুষের জন্য ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত মোমতাজ উদ্দিন ও সুফিয়া মোমতাজের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের পর ভালোবাসায় কেটে গেছে তাদের ৫৪ বছরের সংসারজীবন।

মোমতাজ-সুফিয়ার স্মৃতিতে এখনো সেই প্রথম দেখা, বিয়ে, নতুন সংসারের পার করা সময়গুলো উজ্জ্বল হয়ে আছে। বার্ধক্য জেঁকে বসলেও স্মৃতিজুড়ে সুখের মেলবন্ধন; তাদের মধ্যে নেই দুঃখের কোনো লেশ। নবম শ্রেণি পড়ুয়া সুফিয়া উদাসী জীবন কাটানো মোমতাজ উদ্দিনের লাগাম টেনে ধরেন, তাকে সংসারী করে তোলেন নিজের বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যশক্তি দিয়ে।

গত ১৬ অক্টোবর কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহের সুখী দম্পতি প্রবীণ মোমতাজ উদ্দিন ও সুফিয়া মোমতাজকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এমন সম্মাননা পেয়ে তাদের সুখের সংসারের একাল-সেকাল কালবেলাকে জানান এই দম্পতি।

ময়মনসিংহ নগরের সানকিপাড়া এলাকায় বসবাস করেন তারা। গোলাম রব্বানী জ্যোতি নামে এই দম্পতির একটি ছেলে রয়েছে। মোমতাজ উদ্দিন ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি সুফিয়া মোমতাজকে বিয়ে করেন। তখন সুফিয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মোমতাজ উদ্দিন। পেশাগত জীবনে দীর্ঘ ৪০ বছর যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। শিক্ষকতা করতেন নগরের কুমার উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলে। সেখানে ৪০ বছর শিক্ষকতা করার পর আরও ১০ বছর রেখে দেয় কর্তৃপক্ষ। আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। বার্ধক্যের কারণে এখন তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে কথাও বলতে পারেন না।

কালবেলাকে সুফিয়া মোমতাজ বলেন, তার (মোমতাজ উদ্দিনের) বাউন্ডুলে জীবন ছিল। সাংবাদিকতা করতেন, মাস্টারি করতেন। বিয়ের নাম শুনতে পারতেন না। বলতেন, আমাকে আবার কে বিয়ে করবে? তারই বয়সী তার এক ভাগ্নি ছিলেন। তিনি আবার আমাদের সম্পর্কে আত্মীয়। আমাকে খুব আদর করতেন। এক দিন আমাকে নিয়ে গেলেন তাদের বাসায়। ড্রয়িং রুমে মোমতাজকে আগেই বসিয়ে রাখা হয়। তিনি যে সেখানে আছেন আমি জানতাম না। আমাকে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে পাঠালে গিয়ে দেখি তিনি বসে আছেন। দেখে একটু আনইজি ফিল হলো। সেই একপলকের দেখাতেই আমাকে তার পছন্দ হয়। এরপর ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হলো।

মায়ের আবদার মেনে নিয়েছেন জানিয়ে সুফিয়া মোমতাজ বলেন, ৫৪ বছরের জীবনে আমাদের মনে রাখার মতো খারাপ কোনো ঘটনা নেই। তিনি খুব ভালো মানুষ। সবসময় পরিবারকে সম্মান দিয়েছেন। তিনি চাকরিজীবনে যা টাকা পেতেন, সব আমার হাতে এনে দিতেন, কোনোদিন হিসাব চাইতেন না। তিনি বিয়ে করেছেন একটু বেশি বয়সে। সুচেহারা দেখে মাস্টারের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা। বিয়ের পর আমি তার সহযোগিতায় মেট্রিক পাস করি।

স্বামীর ভালোবাসার সত্যতা প্রকাশ করে সুফিয়া বলেন, গত ৫৪ বছর তিনি আমাকে অন্তর দিয়ে ভালোবেসেছেন, বর্ণনা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। একটু চোখের আড়াল হলেই খোঁজ শুরু করে দিতেন। এই দীর্ঘজীবনে আমাকে রেখে তিনি কোনোদিন ভাতও খাননি। পাতের ভাত অর্ধেক আমাকে না খাইয়ে ছাড়তেন না। তার সবই আজ আমার সুখের স্মৃতি। তিনি আমার জন্য যা করেছেন, যে সম্মান দিয়েছেন, তা কোনো স্ত্রীকে কেউ আজ করে না। সংসারকে তিনি এত ভালোবাসতেন। বাকি জীবন এভাবে কাটিয়েই যেন মরতে পারি।

দাম্পত্য জীবন সুখের করতে হলে করণীয় কী, এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে অল্প বয়স, সমান বয়সে প্রেম করে বিয়ে করছে, এ কারণে দুজনের মধ্যে সবসময় লাগালাগি থাকে। তিনি (মোমতাজ উদ্দিন) আমার চেয়ে ১৫ বছরের বড় ছিলেন। তিনি সংসারের মর্যাদা এমনভাবে দিয়েছেন, আমি অনেক কিছু পেয়ে গেছি জীবনে। লাগামছাড়া জীবন ছিল, সে লাগাম আমি টেনে ধরেছি। দীর্ঘ সংসার জীবনে কখনো খুনসুটিও হয়নি। কিন্তু এ যুগে তুচ্ছ কারণে সংসার ভেঙে দেয়। কারণ সমবয়সী হওয়া স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি সম্মান থাকে না, মান্য করে না। আমার মনে হয় বিয়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকা জরুরি। অন্তত ৫ থেকে ৭ বছরের পার্থক্য থাকলে সে সংসার ভাঙার আশঙ্কা কম থাকে। আগের দিনেও ৫ থেকে ৭ বছরের ব্যবধান ছাড়া বিয়ে হতো না। তার কারণ সংসার ও সমাজে শান্তি ছিল; কিন্তু এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা সমাজ।

সুফিয়া আরও বলেন, আজকের এই গতিশীল জীবনে স্থিরতা বিলীন। এর প্রভাবে মানুষ তার দাম্পত্য জীবনেও স্থির হতে পারছে না। সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যেন মানুষ বিচ্ছিন্ন। অনেক সময় একান্ত সঙ্গীকেই মনে হয় অচেনা, বহুদূরের কেউ। সেখানে মোমতাজ-সুফিয়ার দাম্পত্য জীবন দৃষ্টান্ত উদাহরণ হতে পারে বলে মনে করেন অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে একজনের কারাদণ্ড

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি লাল দল

আ.লীগের ষড়যন্ত্র দৃঢ় হাতে দমন করতে হবে : আমিনুল হক

ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে শিবিরের অভিনন্দন

ঢাকায় আসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

৬ দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বিক্ষোভ

ভারতীয় চিনি ভর্তি দুটি পিকআপ আটক

শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় নয় : শরীফউদ্দীন জুয়েল

জাতীয় দলের পাশে দাঁড়ালেন তাবিথ

১০

সিলেটে কৃষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

১১

অফিসার পদে ইস্টার্ন ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

১২

ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

১৩

হিজাব না পরা নারীদের মানসিক চিকিৎসার ঘোষণা

১৪

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা

১৫

এইচএসসি পুনঃনিরীক্ষার আবেদন / চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৪৬ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন

১৬

প্যারাগুয়ের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে মেসিরা

১৭

ফরিদপুরে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা গ্রেপ্তার 

১৮

ইউএনওর কক্ষে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ!

১৯

মাদ্রাসাছাত্র সাফওয়ানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা

২০
X