গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। শনিবার (৯ নভেম্বর) থেকে সোমবার (১১ নভেম্বর) টানা তিন দিনের অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। চালকরা বলছেন, গত তিন দিন এক স্থানে আটকা পড়ে তাদের নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, সংকট নিরসনে কারখানা মালিকের সঙ্গে আলোচনা করছেন তারা।
কারখানা শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড গ্রুপের ছয়টি কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি আদায়ে গত তিন দিন ধরে তারা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের একটি অংশ রাতেও মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। খবর খবর পেয়ে কয়েক দফা পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ থাকায় বিপাকে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।
শ্রমিকরা জানান, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও আমাদের চার মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিতে টালবাহানা করছে। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে। বেতন বকেয়া থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সোমবার সকালে মোগরখাল এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা মানেননি। কারণ গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই কোনো কথাতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ইউনাইটেড পরিবহনের চালক জসিম উদ্দিন বলেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে কলম্বিয়া গার্মেন্টসের উত্তর পাশে এসে আটকা পড়ি। ওইদিন যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে চলে গেলেও আামি এবং দুই সহকারী আটকা পড়ে আছি। গাড়ি ঘুরিয়ে পেছন দিয়ে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তিন দিন ধরে গোসল খাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়লেও কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করছি।
কাভার্ডভ্যানচালক ইয়াকুব হোসেন বলেন, তিন দিন যাবত আটকা পড়ে আছি সড়কে। কোম্পানির মাল ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সড়ক অবরোধের কারণে যেতে পারছি না। খাওয়া ও গোসলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, আমরা শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের আমাদের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, আমাদের শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সকলে মিলেই কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে টিএনজেডের শ্রমিকরা যে অবরোধ করে রেখেছে তা নিরসনে কাজ করছে। তাদের বারবার বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বেতনের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন