মুখে ফুলের মতো ফুটে আছে একরাশ হাসি। ঠোঁটে দেওয়া লাল রঙের লিপস্টিক। মাথাভর্তি লম্বা চিকচিকে কালো চুল। পরনে রয়েছে বেগুনি রঙের জামা। ছবির দিকে তাকাতেই দেখা যায়, মায়াবী চোখজোড়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফুটফুটে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের এই ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আছে। সেই শিশু মুনতাহার ছবি এখন কেবলই স্মৃতি।
মুনতাহা আক্তার জেরিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। এরপর মুনতাহা প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায়। বিকেল ৩টার দিকে তাকে খুঁজতে গিয়েও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। খেলার সাথীরাও মুনতাহার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।
পরে রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে মুনতাহার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শিশু মুনতাহার লাশ উদ্ধারের ঘটনা জানাজানির পর সারা দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে যায়। তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়ে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি চেয়েছেন মানুষ।
মুনতাহার নিখোঁজ ও লাশ উদ্ধারের বিষয়টি সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নিখোঁজের বিষয়টি কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর মুনতাহার সন্ধান চেয়ে ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাস দেন।
সে সময় ছোট্ট শিশু মুনতাহার সন্ধান দাতাদের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন অনেকেই। মুনতাহার সন্ধান এবং ‘অপহরণকারীকে’ ধরিয়ে দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন কয়েকজন প্রবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা এ ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ফারমিস আক্তার নামের সিলেটের এক নারী সমাজকর্মী মুনতাহার সন্ধানদাতার জন্য একটি স্বর্ণের চেইন পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।
জানা গেছে, নিখোঁজের সাত দিন পর বাড়ির পাশ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির লাশ ডোবায় কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা ছিল। সন্দেহভাজন হিসেবে মর্জিয়া আক্তার (২৫) নামের এক তরুণী আটক হওয়ার পর তার মা ঘটনাকে অন্য রূপ দিতে লাশ ডোবা থেকে শিশুটির বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ফেলে আসতে যান। তখন পথে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন ওই নারী।
পুলিশ বলছে, মুনতাহাকে প্রাইভেট পড়াতেন মর্জিয়া। সম্প্রতি মুনতাহার পরিবার মর্জিয়াকে প্রাইভেট পড়ানো থেকে বাদ দেয়। এর জেরেই শিশুটি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদা লেগে ছিল। গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে।
রোববার দুপুরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মুনতাহার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে গ্রামের মসজিদে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় বহু মানুষ অংশ নিয়ে চোখের পানিতে মুনতাহাকে শেষবিদায় জানায়।
মন্তব্য করুন