কোনো সন্ত্রাসী বাংলাদেশে ভবিষ্যতে মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী কিছু হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জোয়াগ কলেজ মাঠে ডা. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাইয়ের বিপ্লবে নিহত ও আহতদের পরিবারকে অর্থ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে তাহলে তারা কেনো আমার ২ হাজার ভাইবোনকে হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল? আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে তাহলে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গত ১৬ বছর ধরে কেনো অনেককে নির্যাতিত হতে হয়েছিল? সন্ত্রাসী এবং রাজনৈতিক দলের মাঝে পার্থক্য করতে না পারলে আমরা বুঝে নিব আপনারাও রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়েন না। সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। কোনো সন্ত্রাসী বাংলাদেশে ভবিষ্যতে মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী কিছু হতে পারবে না। সন্ত্রাসী আর রাজনীতিবিদ কখনো একই হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, দেখা যাচ্ছে ফ্যাসিস্টদের প্রতি অনেকের কত দরদ, কত মায়া, কত মমতা। আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল! তাদের অধিকার দিতে হবে! ভোটাধিকার দিতে হবে! আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হলে গত ১৬ বছর কেনো বাংলাদেশের মানুষকে ভোটাধিকার দেয়নি?
এ ছাড়া তিনি বলেন, আমরা যখন বলি ফ্যাসিস্ট হাসিনা যে সংবিধানকে বারবার কাটাছেঁড়া করে এদেশের মানুষের ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এদেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো। সেই সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ২৪ এর তরুণদের হাত ধরে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করা হবে। তখন ওনারা বলেন ফ্যাসিবাদী সংবিধানে নাকি কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া করা যাবে না। ২০১৩ সালে বেগম জিয়া বলেছিলেন জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংবিধান ছুড়ে ফেলা হবে। আমরা বলতে চাচ্ছি ২৪ এর গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে এখনই জনগণের সরকার ক্ষমতায় আছে। এখনই শেখ হাসিনার এই মুজিববাদী, ফ্যাসিবাদী সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।
পাশাপাশি আবদুল হান্নান বলেন, আমাদের তরুণরাই রাজনীতি করবে। তরুণরা জীবন দিয়েছে, তরুণরা লড়াই করেছে, তরুণরা প্রতিহত করেছে, প্রতিরোধ করেছে। এই তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আমাদেরকে নয়, জুলাই বিপ্লবে আহত ভাইদের যেন নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। শহীদের বাবা-মাকে যেন নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। যদি উনার সন্তানরা জীবন বাজি রেখে গুলির সামনে না দাঁড়াত আজ আমি আব্দুল হান্নান মাসুদ এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না।
যে নায়কদের জীবনের বিনিময়ে আমরা আজকের নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের আমরা প্রাপ্য সম্মান দিতে না পারলে ভবিষ্যতে আর কেউ জীবন দিবে না। আর কেউ লড়াই করবে না। আর কেউ জীবন বাজি রাখবে না।
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরানোর ক্ষেত্রে ওনারা যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সেই ব্যর্থতার কারণেই আমাদের এই তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব হাতে তুলে নিয়ে রাজপথের নামতে হয়েছিল। তখন জেলায় জেলায়, বিভাগে বিভাগে সমাবেশ করে তরুণদেরকে আহ্বান করে বলা হয়েছিল, তরুণদের নেতৃত্বে আগামীতে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু যখন ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে। তখন তরুণরা যে স্বপ্ন দেখিয়েছে, যে স্বপ্নের কথা বলেতে এসেছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণরা বারবার জীবন দিয়েছে। বইয়ের পাতায় আমরা যেরকম শহীদদের নাম দেখতে চাই। পত্রিকার পাতায় আমরা যেরকম শহীদদের নাম দেখতে চাই যুগের পর যুগ। ঠিক একইভাবে আমরা দেখতে চাই কয়েক যুগ পর এদেশের মানুষ যেনো বলতে পারেন, এই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা বাংলাদেশে এই এই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি।
ডা. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ছাত্র প্রতিনিধি মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী, সংগঠনের উপদেষ্টা গোলাম মর্তুজা, জহিরুল ইসলাম, সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম, বনী ইয়ামিন ও ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন