সিরাজগঞ্জের ‘তাড়াশ-রানীরহাট’ আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীরহাট পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের ৩ হাজার ৮৯০টি গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করে তা কাটার আয়োজন চলছে।
আর গাছ কাটার জন্য উপজেলার তালম ইউনিয়ন ‘বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি’ নামের একটি সমিতি গত ৪ নভেম্বর পত্রিকায় গাছ কাটার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে তারা তাড়াশ উপজেলা বন বিভাগ থেকে গাছগুলোর মূল্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণও করে নিয়েছেন। এখন আগামী ২০ নভেম্বর দরপত্র জমা দান শেষ হলেই সর্বোচ্চ দর দাতা প্রায় চার হাজার গাছ কেটে নিয়ে যাবেন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সঙ্গে সামাজিক বনায়নের জন্য শর্ত, চুক্তি মোতাবেক ২০০৩ সালে তাড়াশ উপজেলার ‘তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা’ সমিতির ২৫ জন সদস্য প্রায় ১০ হাজার ঔষধি, বনজ, ফলদ, ছায়া বৃক্ষ লাগান। এরপর ২০১৬ সালে নতুন করে সদস্য নিয়ে সমিতির সদস্য এখন ৪০ জন। যার মধ্যে বর্তমানে মোট গাছের প্রায় ২৫ ভাগ মারা গেছে।
কাটা গাছের স্থানে আবারও গাছ লাগানো হবে এমন প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে সমিতির পক্ষ গত অক্টোম্বর মাসে সমিতির এক সাধারণ সভায় তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের ওই গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত রেজ্যুলেশন আকারে পাস করে নেন। পরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমিতির পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের কাছে গাছ কাটার অনুমতির জন্য লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনের পর সিরাজগঞ্জ জেলাপরিষদ থেকে সমিতিটি গাছ কাটার অনুমতিও পান। এরপরই ওই আঞ্চলিক সড়কের প্রায় চার হাজার গাছ কাটার আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন গাছ কাটার বিষয়টি এলাকার সচেতন মানুষের নজরে আসে। নজরে আসার পর এলাকাবাসী, পরিবেশবিদরা, তরুণ সমাজ গাছ না কাটার পক্ষে অবস্থান নেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের উপদেষ্টা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি ৩ হাজার ৮৯০টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে আগামী ২০ নভেম্বর যে দরপত্র আহ্বান করেছেন তার মধ্যে ওই সড়কের উভয় পাশের প্রাকৃতিক ভাবে আপনা আপনি নিম, বাবলা, কড়ি, বট, পাইকড়সহ নানা জাতের জন্ম নেওয়া প্রায় অর্ধেক গাছ রয়েছে। যার মালিক কোনো ভাবেই ‘তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি’ নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে থাকা প্রায় অর্ধেক প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া মূল্যবান উপকারী গাছকেও মার্কিং করা হয়েছে। যার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচচর্যা সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সড়কে বাবলা গাছ তারা লাগাননি। তাহলে কেন সেটি মার্কিং করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সমিতির অফিসে আসেন। কথা বলব।
এদিকে ‘তাড়াশ-রানীরহাট’ আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীরহাট পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের ৪ হাজার গাছ কাটার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় আসার পর এলাকার সচেতন নাগরিক, পরিবেশবাদীদের সঙ্গে পাখি প্রেমিরাও গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ এ সড়কের গাছে দিন ও রাতে অসংখ্য পাখি বাস করে। আবার গাছে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে। তাই সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে গণহারে গাছ কাটা হলে বাবুই, শালিক, ঘুঘু, বালিহাঁস, শামুককৈল, বক, ভারই, টোগা, ত্রিশূল, পানকৌড়িসহ পরিবেশের জন্য অতি উপকারী অনেক পাখি বসার জায়গা হারাবে।
তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচচর্যা সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের লাগানোর বাইরে কোনো গাছে মার্কিং করা হয়নি। তাই আমাদের লাগানো গাছ আমরা কাটলেও অন্যেদের ক্ষতির কিছু দেখি না।
অবশ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক দীপক কুমার কর জানান, সচেতন তাড়াশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ওই সড়কের গাছ কাটা বন্ধে জনস্বার্থে প্রতিবাদ সভা করা হবে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এলাকাবাসীর গণ স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন করা হবে।
তাড়াশ উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলা বন বিভাগ গাছের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। তবে গাছ কাটার অনুমতি দেবার দায়িত্ব বন বিভাগের নেই।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, গাছগুলোর ব্যাপারে জেলা পরিষদ সিন্ধান্ত দেবে। কারণ সড়কটি জেলা পরিষদের আওতাধীন।
সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, গাছ কাটা বন্ধে এলাকা থেকে এখন কোনো আবেদন পাইনি। যুক্তিসঙ্গত আবেদন পেলে তা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন