নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আদালত চাইলে হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত, আশা জামায়াত আমিরের

নীলফামারীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : কালবেলা
নীলফামারীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। ন্যায় বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আমাদের বিচারালয় যখন চাইবে, মেহেরবানি করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নীলফামারী পৌরসভা মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ মানুষকে শান্তি দেয়নি। দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নিগৃহীত, নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় দলটি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পর ঝাল মিটেয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে দেশের ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাদেরকে তারা হত্যা করেছিল। হত্যা করেছিল ছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দকে। এ ঘাতকরা কারা ছিল? এদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেওয়া হয়নি, ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের ২৯ জুন আমাদের মাথার তাজ তৎকালীন আমিরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, শহীদ সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এরপর একে একে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা শুরু হলো। ১১ জন শীর্ষ নেতাকে বন্দি করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ আনা হলো।

জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ১৬ আনা মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব। তিনি ফিরে এসে এ দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তার শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে যদ্ধাপরাধের অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল আল্লাহ স্বাক্ষী তাদের কারো বিরুদ্ধে তখন একটি মামলাও দায়ের করা হয়নি। যদি সত্যিই জামায়াত নেতৃবৃন্দ এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতেন তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো না কোনো থানায় একটা হলেও মামলা দায়ের করা হতো। একটা থানাতেও কোনো মামলা ছিল না। তাহলে কেন এই ১১ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো? ৪২ বছর পরে এই মামলা উৎপত্তি হলো কীভাবে?

তিনি আরও বলেন, সেইফ হাউস নামে একটি বাড়িভাড়া করে স্বাক্ষীদের রাখা হয়েছিল। ওই বাড়িতে স্বাক্ষীদেরকে কথা শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, রিহারসেল করা হয়েছিল। এভাবে করে করে স্বাক্ষীদের আদালতে হাজিরা করা হয়েছিল। তাতেও তারা সফল হয়নি। বিচারক বিচার করছেন বাংলাদেশের আদালতে বসে আর ব্রাসেলস থেকে জিয়াউদ্দিন নামের একজন তিনি বিচারকদের শিখিয়ে দিচ্ছেন এই বিচার কীভাবে করতে হবে।

’২৪ এর শহীদদের লাশ এখন আমাদের জাতির ঘাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আচরণে প্রমাণ করতে হবে, রাজনীতিতে প্রমাণ করতে হবে, আগামী দেশ পরিচালনায় প্রমাণ করতে হবে যে আমরা এই শহীদেরকে শ্রদ্ধা করি।

বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ দায়িত্বশীল এবং দেশপ্রেমিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হতে পারে, নির্দয় হতে পারে, পাষাণ হতে পারে, খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রমাণ করে আমরা দায়িত্বশীল এবং দেশপ্রেমিক।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কোথাও পালাবেন না। তিনিও পালালেন, তিনিও চলে গেলেন। প্রতিবেশীকে আমরা সন্মান করি। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশী ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব।

শেখ হাসিনাকে ফেরতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতে দেড় শতাধিকের অধিক মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা আছে, গুমের মামলা আছে, অনেক মামলা তার বিরুদ্ধে আছে। আমাদের বিচারালয় যখন চাইবে, মেহেরবানি করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আপনারা তাকে তুলে দেবেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখার সেক্রেটারি অধ্যাপক আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল, রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, বাংলাদেশ ছাত্র শিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি তাজমুল হাসানসহ রংপুর বিভাগীর আট জেলা ও উপজেলার আমিরগণ বক্তব্য রাখেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করলেন সেনাপ্রধান

‘দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে’

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমাল আদানি

শাবিপ্রবিতে ‘জিয়া ট্রি’ রোপণ

শেখ হাসিনার নতুন অডিও ফাঁস

‘৫৩ বছরেও জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা নেই’

নতুন বিপদে ইউক্রেন, যুদ্ধক্ষেত্রে নামছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা

বয়স ২০ হলেই নিয়মিত স্তন পরীক্ষার পরামর্শ

বিএনপির শোকজের জবাব দিলেন গিয়াস উদ্দিন

সব শহীদের মৃত্যুর বিচার চাই : শহীদ প্রিয়র মা

১০

প্রেমের টানে পটুয়াখালীতে শ্রীলঙ্কান যুবক

১১

ট্রাম্পের বিজয়ে গোপালগঞ্জে খিচুড়িভোজ

১২

এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই : গউছ

১৩

বর্ণাঢ্যর‌্যালি শেষে নয়াপল্টনে রাজপথের আবর্জনা পরিষ্কার করল নেতাকর্মীরা

১৪

‘গণতন্ত্র ও পরিবেশ সুরক্ষায় নির্ভিক সাংবাদিকতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ’

১৫

অতিদ্রুত নির্বাচনের দাবিতে শেষ হলো বিএনপির র‌্যালি

১৬

রেটিং দাবায় তাহসিন চ্যাম্পিয়ন

১৭

বাফুফে সভায় ২৮ আলোচ্য সূচি!

১৮

‘দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে’

১৯

থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশে ডিম নিক্ষেপ

২০
X