রংপুরে গত কিছুদিন থেকে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে অবাঞ্চিত ঘোষণার পর গণঅধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে জাতীয় পার্টি। এবার একইদিনে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকারের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি যেন সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিল।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করবে গণঅধিকার পরিষদ। এতে দলের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত থাকবেন। একইদিন নগরীর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে যৌথ কর্মী সমাবেশের ডাক দিয়েছে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি। তবে তাদের এই কর্মসূচিকে উস্কানিমূলক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্টের উদাহরণ বলছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।
কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যাপক তোড়জোর দুদলের।কয়েকদিন ধরে নগরীজুড়ে পোস্টার-ব্যনার-ফেস্টুন টানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। এক লাখ মানুষের উপস্থিতির টার্গেট নিয়ে বিভাগের আট জেলায় চষে বেড়িয়েছেন নেতারা। রাজনৈতিক দল হিসেবে রংপুরে প্রথম মহাসমাবেশে নিজেদের শক্তি দেখাতে চায় দলটি। পাশাপাশি কর্মসূচি প্রচারে চলেছে দুদলের প্রতিযোগীতামূলক মাইকিং।
জাতীয় পার্টি নিজেদের শক্তি দেখাতে প্রস্ততি সভা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলের নেতারা কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং আট উপজেলা কমিটির নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, গণঅধিকার পরিষদের এ কর্মসূচি ঘিরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হার্ডলাইনে থাকলেও দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে ডেকে সংযমী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এর আগে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নূরকে দায়ী করে শনিবার (২ নভেম্বর) রংপুরে লাঠি মিছিল করেছে জাপা। এ সময় গণঅধিকার পরিষদ ও নুরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। পরদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে ভিপি নুর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জাতীয় পার্টির নেতাদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল গণঅধিকার পরিষদ। সেই সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থনাসহ বক্তব্য প্রত্যাহার করে না নিলে রংপুরসহ সারাদেশে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে গণবিপ্লব এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ খান সজীব অভিযোগ করে বলেন, দলের প্রধান ভিপি নুরকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির দিন একই শহরে পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় পার্টি কী বুঝাতে চায় আমরা জানি না। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দল জাতীয় পার্টিকে হিসেব করে না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার দায় জাতীয় পার্টির।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, দুটি দল আলাদা ভেন্যুতে কর্মসুচি পালন করবে, এতে তো সমস্যা দেখছি না। সামনে যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। পূর্ব প্রস্ততির অংশ হিসেবে আমরা নেতাকর্মীদের ডেকেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব তবে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করতে আমরা প্রস্ততি নিয়েছি।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, দুটি দল তাদের রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে কর্মসূচি পালন করবে। দুদলের নেতাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে সজাগ আছি। তবে রংপুরে এর আগেও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে কোনো ঝামেলা হয়নি আশা করছি এবারও হবে না।
মন্তব্য করুন