ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খুলনার তেরখাদা পানতিতা গ্রামের মো. জাফর শেখের ছেলে মো. হামিদ শেখ। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলালসহ ৪৪ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) নিহতের মা রাশিদা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সরাসরি নির্দেশে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ হেলালের নেতৃত্বে এবং শেখ হেলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন পাশার তত্ত্বাবধানে খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাছাইকৃত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আন্দোলন দমাতে নগদ অর্থের যোগান, অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজেরা উপস্থিত থেকে গুলি বর্ষণ, দেশীয় অস্ত্র, হকিস্টিক এবং রাম দা নিয়ে হামিদসহ আন্দোলকারীদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে করে হামিদসহ অসংখ্য আন্দোলনকারী নিহত ও আহত হয়।
থানায় দায়েরকৃত মামালার বিবরণীতে জানা যায়, গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১৬ জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে মো. হামিদ শেখ ১৭ জুলাই থেকে রাজপথে নেমে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন শুরু করে। গত ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনের রাস্তায় ছাত্র-জনতা মিছিল করে। তাদেরকে দমন করার জন্য আসামিদের পরিকল্পনা এবং সরাসরি নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উল্লিখিত আসামিসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিকলীগের কর্মীরা গুলি চালায়।
আসামিদের ছোড়া গুলিতে জাফর শেখের মাথা ও বুক গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার গুলিবিদ্ধ দেহকে আসামিরা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধায় ব্যর্থ হয়। আন্দোলনকারীরা হামিদকে সাভার গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য, বাগেরহাট-১) শেখ হেলাল, সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার এনামুর রহমান, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত পাপ্পু, সাবেক সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৯ সাভার) তালুকদার মো. তৌহিদ মুরাদ, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হালিম, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস হাসিনা দৌলা, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ঢাকা-২০ (সাভার) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।
খুলনার আসামিরা হলেন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক শেখ সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল পাশা খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা বেগ লিয়াকত আলী, মাকসূদ আলম খাজা, খানহাজান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবিদ হোসেন, শেখ সোহেলের ক্যাশিয়ার মো. মফিজুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য বাগেরহাট-২ শেখ সারহান নাছের তন্ময়, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ, খুলনা-৩ এর সাবেক সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ানের ভাই ও এপিএস মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ, মুন্সি আব্দুর রশিদ, সেলিম রেজা, রিপন হাওলাদার, রনবীর বড়াই সজল, দেবদুলাল বড়াই বাপ্পি, মেহেদী হাসান রাসেল, খান জাহান আলী থানার শেখ জালাল, শেখ ফরিদ, শেখ সজীব প্রমুখ।
মন্তব্য করুন