নাটোরের লালপুরে সরকারি খাস জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ ও ৮টি মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় এ প্রতিবেদক।
দেখা যায়, বেড়িলাবাড়ি গ্রামের জমির উদ্দীনের ছেলে মহিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জোরপূর্বক একটি ঘর নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন সরকারি খাস জমি। কেটে নিয়েছেন ৮টি মেহগনি গাছ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তপুর মৌজায় হাজি মো. নাজিম উদ্দীনের মালিকানাধীন জায়গার ওপর দিয়ে সরকারি রাস্তা হওয়ার পর থেকে ওই জায়গাটি তার দখলে থাকে। সেখানে তিনি কয়েকটি মেহেগনি গাছ লাগান। কিন্তু ২০২৩ সালে রাতের অন্ধকারে বেরিলাবাড়ি গ্রামের জমির উদ্দীনের ছেলে মহিবুর রহমান ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি সেখানে বসবাস করেন না। শুধু দখল করার জন্য ঘর নির্মাণ করেছেন।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খন্দকার আহসান হাবীবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় ইউএনও অফিস। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আর এস ১৫ নং মৌজাস্থিত ২৮৫ নং দাগে ০.৬৮ একর জমি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমি। ১০৪৯ স্মারক মূলে সরেজমিন পরিদর্শন করে মহিবুর রহমান অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হওয়ায় প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদন জমা হওয়ার এক বছর অতিবাহিত হতে চললেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রশাসন।
গত বুধবার লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ফের সরকারি রাস্তা দখলে নিয়ে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ ও গাছ কেটে নেওয়া প্রসঙ্গে অভিযোগ দেন নাজিম উদ্দীনের নাতি জাহাঙ্গীর।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর রাতে ওই জমিতে হাজি মো. নাজিম উদ্দীনের লাগানো মেহেগনি গাছগুলো রাতের অন্ধকারে কে বা কারা কেটে নিয়ে যায়।
স্থানীয় আব্দুল মান্নান ও জাকাত আলী জানান, হাজি নাজিম উদ্দিনের মালিকানা জমি দিয়ে সরকারি রাস্তা হওয়ার পর থেকে খাস খতিয়ানভুক্ত ওই জায়গাটি তার ভোগ দখলে ছিল। এই জায়গা দিয়ে স্থানীয় মানুষ মাঠের যাতায়াত ও ফসল বাড়িতে আনার কাজে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু মহিবুর ২০২৩ সালে রাতের অন্ধকারে ঘর নির্মাণ করে জোরপূর্বক দখলে নেন।
এ বিষয়ে জানতে মহিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও মেহগুনি গাছের মোটা ডালপালা তার আঙিনায় এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় মহিবুরের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়ি করার জমি না থাকায় খাস সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করেছেন। গাছ কে কেটেছে জানা নেই। তবে ডালপালা তার স্বামী মহিবুর বিল থেকে নিয়ে এসেছেন।
পরে মোবাইল ফোনে বিষয় জানতে চাইলে মহিবুর রহমান জানান, বাড়ি করার নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় সরকারি খাস জমিতে ঘর উঠিয়েছি। সরকারিভাবে কোনো বন্দোবস্ত নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা গাছ কেটেছে বিষয়টি আমি জানার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ঘর নির্মাণ করেছেন মহিবুর। তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানি না।
এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন