রাজা-বাদশাহের আমলে রাজার পাশাপাশি কখনো গোলাম থাকতে পারেনি। রাজা থাকতেন বিশাল রাজপ্রাসাদের উচ্চ সিংহাসনে আর গোলামের বসবাস ছিল মাটির কুঁড়েঘর মাদুরে। যুগের পর যুগ ধরে রাজা ও গোলাম শব্দ দুটি বিপরীতার্থক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আধুনিককালে রাজা আর গোলাম শব্দ দুটির কার্যত ব্যবহার না থাকলেও সমমানের পদপদবি রয়েছে। জীবন ব্যবস্থায় রয়েছে সেই আকাশ-পাতাল ফারাকও।
রাজনীতিতে ফারাক থাকলেও গ্রামেগঞ্জে অসংখ্য রাজা-গোলামের বন্ধুত্ব রয়েছে। রাজা নামে যেমন দরিদ্র চাকর রয়েছে আবার গোলাম নামে রয়েছে ধনাঢ্য ব্যক্তিও।
ঠিক তেমনই রাজা ও গোলামের পাশাপাশি হোটেল দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনা নদীর তীরে। যমুনার নৌকাঘাটে অসম্ভব জনপ্রিয় দুটি হোটেল মালিকের নাম মো. রাজা সাহেব ও মো. গোলাম সরকার। হোটেলের নামও দেওয়া হয়েছে রাজার হোটেল ও গোলামের হোটেল।
জানা যায়, এনায়েতপুর নৌকাঘাটে দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলছে গোলামের হোটেলটি। এ হোটেলে সুস্বাদু যমুনার মাছ অনেক জনপ্রিয়। নদী পারাপার হওয়া মানুষ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ প্রতিদিন এ হোটেলটিতে দুপুরের খাবার খেতে আসে। এর পাশেই ১৫ বছর ধরে হোটেল দিয়েছেন রাজা মিয়া। একইভাবে তিনিও যমুনা নদীর সুস্বাদু মাছ দিয়ে খাবার পরিবেশন করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, পাশাপাশি টিনের দুটি বিশাল আকৃতির ঘরের একটিতে রাজার হোটেল ও অন্যটিতে গোলামের হোটেল চলছে। এর দক্ষিণে রয়েছে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং তার দক্ষিণে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়। হোটেল দুটির সামনেই যমুনার টাটকা পাবদা, চিংড়ি, বোয়াল, বাঘাইর, বাইম, গোচি, বাশপাতারি ইত্যাদি সুস্বাদু মাছ রান্না করা হচ্ছে। ভেতরে শত শত মানুষের ভিড়। সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত একটি সিটও খালি নেই হোটেলের। কেউ বসে আবার সিট না পেয়ে কেউ দাঁড়িয়েও খাবার খাচ্ছে।
কথা হয় হোটেলে খেতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হেলাল, পাবনার বেড়া থেকে ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল্লাহ, জহিরুল, সিরাজগঞ্জ শহর থেকে আসা বিপ্লব, শহিদুলসহ বেশ কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে।
তারা বলেন, এনায়েতপুরে যে কোনো কাজে এলেই আমার এ হোটেলে খাবার খাই। এখানে সবার সামনেই যমুনার তাজা টাটকা মাছ রান্না হয়। এ ছাড়া দেশি মুরগি ও গরুর মাংস রান্না হয়। খাবার মানও যথেষ্ট ভালো। এ কারণে এখানে আমরা আসি। তবে হোটেলে সবসময়ই ভিড় থাকে। এ কারণে খাবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে বেড়াতে আসা কয়েকজন বলেন, গোলামের হোটেলের নাম সারা জেলায় ছড়িয়ে আছে। তার পাশেই রাজার হোটেল, এ কারণে এ হোটেলের নামও ছড়িয়ে পড়েছে। কর্মচারীদের পাশাপাশি রাজার হোটেলের মালিক রাজা সাহেব নিজেও গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি এনায়েতপুর থানার খোকশাবাড়ি গ্রামে। প্রায় ১৫ বছর এখানে হোটেল দিয়েছি। এখানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেন বলে জানান।
একইভাবে কর্মচারীদের পাশাপাশি গোলামের হোটেলের মালিক গোলাম সরকার নিজেই খাবার সরবরাহ করছেন গ্রাহকদের মাঝে। ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা গোলাম হোসেন বলেন, ২০ থেকে ২২ বছর এখানে হোটেল দিয়েছেন তিনি। যমুনা নদীর টাটকা মাছ গ্রাহকের সামনেই রান্না করে খাওয়ান। এভাবেই তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে হোটেলটিতে প্রতিদিন ১ লাখ টাকারও বেশি বিক্রি হয়।
মন্তব্য করুন