আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুকে ‘লবণ চোর’ বলে মানলেই উপহার হিসেবে মিলছে এককেজি করে লবণ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঝালকাঠি শহরের রোনালসে রোডের আমির হোসেন আমুর পোড়া ও পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, প্রধান ফটকে আমুর ছবি দিয়ে লবণ রাখা হয়েছে। পথচারীরা ছবি ও লবণ দেখে ‘আমু লবণ চোর’ বলে স্বীকৃতি দিলেই এককেজি পরিমাণের এক প্যাকেট লবণ উপহার দেওয়া হচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইয়াছিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর কারণে আমির হোসেন আমুর ‘লবণ চোর’ হিসেবে পরিচিতিটা অনেক পুরোনো। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব দেখিয়ে জমি দখল করেছেন। তাকে টাকা না দিলে কোনো কাজই হতো না ঝালকাঠিতে। তার প্রভাব ও অস্ত্রবাজ অনুসারীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। তাকে গ্রেপ্তার করায় ঝালকাঠির প্রতিটা মানুষ খুশি হয়েছে। তাই আমরাও তাকে পুরোনো পরিচয়ে পরিচিত করতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি।
বিকেলে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ঝালকাঠিতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। এর আগে বেলা দেড়টার দিকে পশ্চিম ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ওই বাড়ি থেকে পোড়া-অক্ষত মিলিয়ে প্রায় চার কোটি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এর আগেই আমু পালিয়ে যান। এর পর থেকে ওনার অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। বর্ষীয়ান এ নেতার নামে একাধিক মামলা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশনায় তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া আমুর পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ (মালেক) থেকে। এর পরের যত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল, সব কটিতেই দলের প্রার্থী ছিলেন তিনি। ২০০০ সালের উপনির্বাচনে ঝালকাঠি-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে দায়িত্ব পান শিল্পমন্ত্রীর। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন আমু।
মন্তব্য করুন