বগুড়া শহরের একেবারে কেন্দ্রেই সাতমাথা এলাকা। সেখানকার মুক্তমঞ্চের পাশের স্মৃতিফলকে বেশ কয়েকজনের নাম ও বয়স সংবলিত ব্যানার সেঁটে দেওয়া হয়েছে। নামগুলো জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত স্থানীয় ছাত্র-জনতার। দেশের বৈষম্য দূর করতে হেসে-খেলে জীবন উৎসর্গ করা বীরদের নাম যেন শোভা বাড়িয়েছে ভাঙাচোরা পুরোনো ফলকেরও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় বগুড়ায় নিহতদের নাম-ঠিকানা সংবলিত স্মৃতিফলক উন্মোচন করেছে বগুড়াভিত্তিক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সংগঠন জাস্টিস ফর জুলাই।
সোমবার (৪ নভেম্বর) জুলাইয়ে নিহতদের স্মরণে নাম ফলকটির উন্মোচন করা হয়। স্মৃতিফলকে প্রাথমিকভাবে ১৯ জন শহীদের নাম স্থান পেয়েছে। ভবিষ্যতে যাচাই-বাছাই করে আরও নাম যুক্ত করা হবে।
১৯ জনের তালিকায় শিশুই চারজন। সব থেকে ছোট রাতুলের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বাকি তিনজনের বয়স আরেকটু বেশি। অথচ জীবনের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তাদের পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে জীবনের শুরুতেই। অন্যদিকে জীবন সায়াহ্নে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৭০ বছরের আব্দুল মান্নান।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় বগুড়ায় নিহতদের নাম-ঠিকানা এ ফলকে লেখা আছে। এদের মধ্যে বগুড়াতেই প্রাণ হারান অন্তত ১৬ জন। অন্য তিনজন মারা যান ঢাকা এবং সাভারে। আগামীতে যাচাই-বাছাই করার পর আরও নাম যুক্ত করা হবে।
স্মৃতিফলকে স্থান পাওয়া ১৯ শহীদ হলেন, বগুড়া সদরের কমর উদ্দীন বাঙ্গী (২১), সিয়াম শুভ (১৬), আব্দুল মান্নান (৭০), শিমুল মণ্ডল (৪৫), মাহফুজার রহমান (৩০), জুনাইদ ইসলাম রাতুল (১২), রিপন ফকির (৩৬), শিবগঞ্জের রনি মিয়া (২৮) ও সেলিম হোসেন (৩৫), দুপচাঁচিয়ার আবু রায়হান (২৯), কাহালুর মনিরুল ইসলাম (২৩), গাবতলীর জিল্লুর সর্দার (৪৫), সাকিল হাসান মানিক (২৩), সাব্বির হাসান (১৪), নন্দীগ্রামের সোহেল রানা (৩০), সোনাতলার আবদুল আহাদ সৈকত (১৬), সারিয়াকান্দির রহমত মিয়া ধলা (২১), দিনাজপুরের হিলির মো. সেলিম (৪৫) এবং বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত একজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট শহরের নবাববাড়ি ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে পাকা রাস্তায় কমর উদ্দীন বাঙ্গী, সাতমাথা স্টেশন রোডে আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে সেলিম হোসেন, কাঁঠালতলা-বড়গোলা রাস্তায় বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান, ২ নম্বর রেল গুমটির উত্তরে ঝাউতলায় রিপন ফকির এবং ঝাউতলায় পাকা রাস্তায় জিল্লুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
জাস্টিস ফর জুলাই সংগঠনের সদস্য সচিব এ এম জেড শাহরিয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নাম সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছি। নতুন নাম পেলেই ফলকে অন্তর্ভুক্ত করব।
তিনি আরও বলেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাচ্যুত হাসিনাসহ সব অপরাধীর বিচার দ্রুত করতে হবে। অবিলম্বে হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন