নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিনকে রূপান্তরিত করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে একদিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমি হুমকির মুখে। তেমনি বিকট শব্দে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার (৭ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের গোদারবাজার সংলগ্ন নাউতারা ব্রিজের দক্ষিণ দিকে নদীর বাঁধ ও চলাচলের রাস্তা সংস্কারে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। আর নিষিদ্ধ ড্রেজার চালানোর হুকুমদাতা একই ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ (মনি)। এমনটিই জানিয়েছে ওই ড্রেজার পরিচালনাকারী কর্মচারী দুলু মিয়া ও আইয়ুব আলী।
আরও পড়ুন : নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পদ্মায় বালু তোলার মহোৎসব
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে আমাদের অবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। রাস্তা মেরামতের কথা বলে বালু উত্তোলন করা হলেও তা না করে পাশের পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আর সামান্য কিছু বালু রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে।
ড্রেজার চালনাকারী আইয়ুব আলীকে মালিকের নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি ক্ষেপে যান। বলেন, ‘ভিডিও করে চলে যান।’
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যন্ত্র ড্রেজারের চালক দক্ষিণা জানান, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। ড্রেজার চালানোর অনুমতি আছে। এটা চেয়ারম্যানের ড্রেজার। আর তার ঠিকাদারিতে ড্রেজার চালিয়ে সরকারি কাজের বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আপনার কিছু বলার থাকলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।
মো. আশিক ইমতিয়াজ (মনি) নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান ড্রেজারের বিষয়ে বলেন, আমি এই কাজের ঠিকাদার নই। আচ্ছা আগে বলেন, ওখানে কেনো ড্রেজার চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে হতে লোকাল অ্যারেজমেন্টের মাধ্যমে কাজটা করতে হবে।
পরে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন প্রজ্ঞাপনের কথা বললে চেয়ারম্যান বলেন, ওখানে গিয়ে আপনারা যদি এসব কথা বলেন। তাহলে বলেন ও লেখেন। এখানে তো আর বলার কিছু নেই।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ওই রাস্তাটা ভেঙে যাচ্ছে। এটা আপনারা একটা বার লিখলেন না, রিপোর্টও করলেন না। এখানে মূলত ৫০০ পরিবারের বসতবাড়ি। নদীর ধারের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। সে জন্য নদী থেকে বালু তুলে জিও ব্যাগে ভরে সড়ক সংস্কার করা হবে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, আমাদের লোক পাঠানো হবে। কিন্তু পরে প্রতিবেদক একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার জানান, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নাউতারা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. আবুল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা নেওয়া আদেশ দেন। কিন্তু উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে জানানোর দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন মো. আব্দুল হোসেন। আর তিনি উপস্থিত হওয়ার ১০ মিনিট আগেই বালু উত্তোলনের ড্রেজার, পাইপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে নেয় শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে কোনো মন্তব্য না করে ভূমি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, অফিসে আসেন তখন কথা হবে।
পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষের জরুরি কাজ থাকতে পারে না। আমি তো সরেজমিনে গিয়ে কোনো ড্রেজার পাইনি। এ কথা বলে কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল কেটে দেন।
মন্তব্য করুন