রাজশাহীর নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আফিয়া আখতার। রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে যোগ দিয়েই বিকেলে তিনি রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত দুজন শহীদ পরিবারের কাছে ছুটে যান। এ সময় দুই পরিবারের সবার খোঁজখবর, দিয়েছেন সান্ত্বনা।
জানা গেছে, রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও ইপিজেডের বেঙ্গল কোম্পানির সিনিয়র অপারেটর মিনারুল ইসলাম। রোববার বিকালে নিহত সাকিব আনজুম ও মিনারুলের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন নবাগত জেলা প্রশাসক।
নিহত সাকিব আনজুম নগরীর রানীনগর এলাকার মাইনুল হকের ছেলে এবং মিনারুল ইসলাম নগরীর গোলজারবাগ এলাকার মৃত এনামুল হকের ছেলে।
এ সময় জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার জানান, শহীদদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতরা দেশের সম্পদ ও গর্ব। তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সার্বিক প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে আছে ও সব সময় যেকোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে। সে জন্যই দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমি এই শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
ডিসি বলেন, আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাকিব আনজুম ও মিনারুল ইসলামের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই জেলার ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. মহিনুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আজ নবাগত জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি সর্বপ্রথম কাজ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা রাজশাহীর জন্য এমন জেলা প্রশাসক আশা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আশা পূরণ হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় করার আহ্বান জানান।
শহীদ সাকিব আনজুমর স্ত্রী নিশাত তাবাসসুম বলেন, এত অল্প বয়সে স্বামীকে হারাব, কখনো কল্পনা করিনি। আমার স্বামীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। তবু ভালো লাগছে আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদদের মর্যাদা পেয়েছেন। আজ জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের খোঁজখবর নিতে এসেছেন। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
আন্দোলনে নিহত মিনারুলের মা ডলি খাতুন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মিনারুল সবার ছোট। ইউসেফ স্কুল থেকে চাকরি পেয়ে, ১২ বছর ঢাকার নারায়ণগঞ্জ এলাকার ইপিজেডের বেঙ্গল কোম্পানির সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করেছে। আমার কলিজার টুকরা মিনারুল গত ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। আল্লাহ আমার সন্তানকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
মন্তব্য করুন