বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সময় ৪ আগস্ট পৃথক স্থানে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তখন ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ দাফন করা হয়। পরে এসব ঘটনায় নিহত পাঁচজনের তাদের স্বজনরা বগুড়া সদর থানায় পৃথক ৫টি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর আদালত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে তাদের লাশ উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন কমর উদ্দিন বাঙ্গী, সেলিম হোসেন, আব্দুল মান্নান, রিপন ফকির ও জিল্লুর রহমান।
এ বিষয়ে বগুড়া কোর্ট পরিদর্শক মোসাদ্দে হোসেন জানান, পাঁচ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিহতদের মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণের জন্য ২৮ অক্টোবর তাদের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহা গত বৃহস্পতিবার তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলাগুলো সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিহত ব্যক্তিদের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বগুড়াকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে যথাযথ মর্যদায় পুনরায় লাশ দাফন করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশের অনুলিপি বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ও বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সময় গত ৪ আগস্ট বগুড়ায় বগুড়া শহরের নবাববাড়ি ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে পাকা রাস্তায় আসামিদের ছোড়া গুলি, ককটেল ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কমর উদ্দিন বাঙ্গী গুরুতর জখম হলে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কমর উদ্দিন মারা যান।
অন্যদিকে একই দিনে শহরের সাতমাথা স্টেশন রোডে আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে শিবগঞ্জ উপজেলার পালিকান্দার সেকেন্দার আলীর ছেলে সেলিম হোসেন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ছাড়া ওই দিন কাঁঠালতলা বড়গোলা পর্যন্ত রাস্তার ওপরে আসামিদের ছোড়া গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আব্দুল মান্নান জখম হলে ছাত্র-জনতা তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অত্যধিক রক্তক্ষরণে তিনিও মারা যান।
৪ আগস্ট শহরের ২ নম্বর রেল গুমটির উত্তরে ঝাউতলায় রিপন ফকির আহত হলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রিকশা-ভ্যানযোগে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়। একই দিন গাবতলীর গোড়দহ উত্তরপাড়ার মৃত মুসা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান তার বাড়ি থেকে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বগুড়া শহরে আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে শহরের ২ নম্বর রেল গুমটির উত্তর পাশে ঝাউতলায় পাকা রাস্তায় এলে আসামিদের ছোড়া গুলি, ককটেল ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জিল্লুর রহমান জখম হন। গুরুতর আহত জিল্লুরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কোর্ট পরিদর্শক আরও জানান, নিহত কমর উদ্দিন বাঙ্গী, সেলিম হোসেন, আব্দুল মান্নান, রিপন ফকির ও জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তাদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়। পরে তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক ৫টি হত্যা মামলা করা হয়।
৫টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান কামাল, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫৬৭ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ৬৫০ জনকে উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন