রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অপসারণ না করলে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হাসপাতালের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পরে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বর্তমান এই অধ্যক্ষকে না সরালে মঙ্গলবার হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টারর কর্মবিরতি পালন করা হবে। তারপরেও দাবি না মানা হলে বুধবার (৬ নভেম্বর) থেকে শাটডাউন পালন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের দোসর কোনো চিকিৎসকের ঠাঁই এখানে হবে না। নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরাসরি ছাত্রদের দমনে নিয়োজিত ছিলেন। এমন একজন লোককে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়াটা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার সামিল।
এর আগে বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে নতুন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে রমেকের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সময়ের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলানোর জন্যে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি ও সেই সময়ের অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডা. মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন তার কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তার কক্ষে বসে থাকতো। এ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আপত্তি তুললেও সেসব কথা কানে তোলেননি তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা ৫ বছর উপাধ্যক্ষ ও ৪ বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন তিনি। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
এদিকে একই দিন সকালে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সচেতন রংপুরবাসীর ব্যানারে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ ছড়াচ্ছে। তিনি অত্যন্ত সজ্জন ও অরাজনৈতিক একজন মানুষ। অথচ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ডা. মাহফুজ নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তবুও তাকে স্বৈরাচারের দোসর বলা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে। পরের দিন বুধবার নতুন অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের একটি পক্ষ এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন