চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তাকে শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ।
অনুষ্ঠানে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শপথ পাঠ শেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে এমন একটি জায়গায় রয়েছে, যেখানে পাহাড়, সমুদ্র, পর্যটন, স্পেশাল ইকোনমিক জোন থেকে শুরু করে প্রতিটিতে এই চট্টগ্রাম নগরের ওপর দিয়ে যেত হয়। বাংলাদেশকে বাঁচানোর যে চিন্তা, দেশ নিয়ে যে চিন্তা; কাজেই চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। এটা অস্বীকার করার জোঁ নেই।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে জলমগ্ন মুক্ত চট্টগ্রামের প্রত্যাশা রেখেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালনায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
হাসান আরিফ বলেন, বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা এবং শ্রমিক যে অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ করেছে, সেই লক্ষ্য পূরণে মেয়র কাজ করবেন বলে আশা করি। পাহাড় ঘেরা জলমগ্ন মুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা। চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবে। সিটি কর্পোরেশনগুলোতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। বর্তমান চট্টগ্রামের মেয়রের মেয়াদ আইন অনুযায়ী যেটা হবে ততদিন তিনি দায়িত্বে থাকবেন।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেনকে চসিকের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা ‘সত্যিকার অর্থেই একটি ন্যায়বিচার’ হয়েছে। চসিক নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে শাহাদাত হোসেন জিতেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা বলপূর্বকভাবে সেই ফলাফল কেড়ে নেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করিয়েছে। ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থান সেই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যেন এই ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে, জনগণের যে দুর্বার প্রতিরোধ এই প্রতিরোধ যেন ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূল করে।
আগামী দিনগুলোতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদী জানিয়ে তিনি বলেন, শাহাদাত হোসেনকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণার পর প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ গত তিনটি নির্বাচন দখল করে নিয়েছে। এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
এদিকে ডা. শাহাদাত হোসেনের ‘কামিয়াবি’ (সাফল্য) প্রার্থনা করেছেন বিএনপির ‘অভিমানী’ সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম মনজু। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে চসিকের ৪১ ওয়ার্ডের সমস্যা সারাতে একজন যোগ্য অভিভাবক হিসেবেও কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা তার।
মনজুর আলম বলেন, জনগণের একজন প্রতিনিধি হয়ে চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো সারাতে ডা. শাহাদাত অভিভাবক হিসেবে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা করি। যে কয়েকদিন তিনি দায়িত্ব পাবেন আশা করি সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে চসিকের কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। আমরা নগরবাসী উনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবো। আমি আশাবাদী তিনি কামিয়াবি হবেন।
এদিকে, তার শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগের দিন শনিবার থেকেই ঢাকায় অবস্থান করেন চট্টগ্রামের হাজার হাজার নেতাকর্মী। বলা চলে শাহাদাতের শপথ কেন্দ্রীক ঢাকায় হয়ে গেলে বিএনপির এক সমাবেশ।
ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ নেতা, মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ ২৭ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এখান থেকে বের হয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতে যান চসিক মেয়র। এতে চট্টগ্রাম থেকে আগত নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মন্তব্য করুন